যশোরের বেনাপোল বন্দর রেলপথ দিয়ে আমদানি বাণিজ্য কমেছে। চলতি বছর ১১ মাসে আমদানি পণ্যের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯২৬ টনে। এ সময় পণ্যবাহী ওয়াগনের সংখ্যা কমেছে ৫ হাজার ৬৭৭টি। সব মিলিয়ে গত বছরের ১১ মাসের তুলনায় চলতি বছর সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে বৈশ্বিক মন্দা, অন্যদিকে রেলস্টেশনে ইয়ার্ড আর পণ্যাগার সংকট এ পরিস্থিতির মুখোমুখি করে দিয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বাণিজ্য সম্প্রসারণে অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের ১৩টি বন্দরের সঙ্গে ভারতের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে একমাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে পণ্য পরিবহন হয়। কভিড পরিস্থিতির আগে রেলে শুধু পাথর ও জিপসাম জাতীয় পণ্য আমদানি হতো। কভিডের কবলে পড়ে ২০২০ সালে যখন সড়ক পথে আমদানি বন্ধ হয়, তখন সরকারের প্রচেষ্টায় রেলে গার্মেন্ট, কেমিক্যাল, খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাতে সময় ও খরচ সাশ্রয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ে রেলপথে। বর্তমানে আরো বেশি পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলেও একদিকে বৈশ্বিক মন্দা, অন্যদিকে রেলের দুর্বল অবকাঠামোয় বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যশোর-নড়াইল-ভাঙ্গা রেলপথ চালু হলে পদ্মা সেতু হয়ে রেলে পণ্য পরিবহন আরো বাড়বে। ফলে রেলে কনটেইনার টার্মিনালসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো জরুরি ভিত্তিতে সম্প্রসারণ করা দরকার।
এ ব্যাপারে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বলেন, ‘রেলপথে খরচ কম ও সাশ্রয়ের কারণে বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি। তবে দুর্বল অবকাঠামোর কারণে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন। রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারকে আরো আন্তরিক হওয়া দরকার। সামনের সময়গুলোয় পদ্মা সেতুতে পণ্য পরিবহনে বাণিজ্যিক রেল চালু হবে। এর আগের অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা দরকার।’
রেলওয়ের দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালে রেলপথে ভারত থেকে ৮ হাজার ৬৭৫টি ওয়াগনে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৪ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময় সরকারের রাজস্ব এসেছে ২০ কোটি ৫৮ লাখ ১৭ হাজার ৬২৪ টাকা। আর ২০২৩ এসে ২ হাজার ৯৯৮টি ওয়াগনে আমদানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার ৫৫৮ টন। তাতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৬ কোটি ৮২ লাখ ৮১ হাজার ৯০৭ টাকা। ২০২২ সালের ১১ মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের ১১ মাসে পণ্য পরিবহনে ওয়াগনের সংখ্যা কমেছে ৫ হাজার ৬৭৭টি। তাতে আমদানি কমেছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯২৬ টন এবং রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ টাকা।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বেনাপোল রেলস্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর জন্য লাইন সম্প্রসারণ করতে হবে। এ ছাড়া কনটেইনার টার্মিনাল না থাকায় পণ্য খালাসে বেগ পেতে হয়।
বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, ট্রেনে আমদানি সহজ ও সাশ্রয়ী হলেও জায়গার অভাবে পণ্য খালাসের জন্য দিনের দর পর দিন ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকছে। তাতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে কার্গো রেল, পার্সেল ভ্যান ও কনটেইনারের মাধ্যমে পণ্য আমদানি হচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দা রাজস্ব ঘাটতির জন্য কিছুটা দায়ী। আর ব্যবসায়ীরা অবকাঠামো নির্মাণের যে দাবি জানিয়েছেন, তা খুব দ্রুত শুরু করা হবে। এরই মধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়েছে।