জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে বিকন সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সঙ্গে কোম্পানিটির একাধিক বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে বলে অর্থসংবাদকে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ফাইন ফুডস এর ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের বড় অংশই এখন বিকন গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইতিমধ্যে কোম্পানির প্রকল্প পরিদর্শনেও গেছে সংশ্লিষ্ঠরা। বর্তমানে ফাইন ফুডসের মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নিকট রয়েছে মাত্র ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ কারণে কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের নির্দেশনা পরিপালনে গত ২৯ জুলাই ফাইন ফুডসকে চিঠি দেয় বিএসইসি। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ফাইন ফুডস কর্তৃপক্ষ বিএসইসিকে জানিয়েছে, এ নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ করতে ইচ্ছুক।
এ বিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত পর্ষদ সদস্য হতে ইচ্ছুক এমন কারও কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। তবে কেউ যদি আইন মেনে নূন্যতম শেয়ার ধারন করে বোর্ডে আসতে চায়, তাহলে এটা কোম্পানির জন্য ভালো। তাছাড়া বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালন করতে আমরা ইচ্ছুক। ইতিমধ্যেই আমরা বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি আমরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন কমিশনার নাম না প্রকাশ করার শর্তে অর্থসংবাদকে বলেন, কোন কোম্পানিতে যদি একজন শেয়ার হোল্ডার পরিচালকও থাকেন তাহলে তাকেই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে হবে। এ ব্যপারে কোন ছাড় দেয়া হবে না। কারন একজন পরিচালক দিয়েও কোম্পানি চলতে পারবে, বাংলাদেশে এমন আইন রয়েছে।
এদিকে ২০১১ সালে বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ন্যূনতম ৩০ শতাংশ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করলেও অনেক কোম্পানি তা পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গত ২৭ জুলাই এক নির্দেশনার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ করতে ৪৫ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেয়। এসময় শেষ হলে ফের আরও সময় বৃদ্ধি করা হলেও ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করতেই হবে বলে বিএসইসির একাধিক সূত্র অর্থসংবাদকে নিশ্চিত করেছে।
গত ২০১৯ সালের ৩০ জুন দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ফাইন ফুডসে পাঁচজন পরিচালক রয়েছেন। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ছাড়া অন্য সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। নজরুল ইসলামের কাছে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক সুজিত সাহার কাছে রয়েছে মাত্র ২৬০টি শেয়ার। এ ছাড়া আরেক স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আলম বিশ্বাসের কাছে ৩ হাজার ৬৬০টি শেয়ার রয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনা পরিপালন করতে হলে কোম্পানির মোট শেয়ারের ২৪ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার কিনতে হবে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি মুনাফায় রয়েছে ফাইন ফুডস। চলতি ২০১৯-২০ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৪৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি। গত পাঁচ বছরে এই কোম্পানির সর্বোচ্চ আয় ছিল ২০১৬ সালে। ওই সময় কোম্পানির নিট মুনাফা হয় ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। আর ২০১৯-২০ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ফাইন ফুডসের নিট মুনাফা হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ টাকা। কোম্পানিটির প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে মাছ চাষ। কিশোরগঞ্জে কোম্পানির মূল প্রজেক্ট। এ ছাড়া ময়মনসিংহে আরেকটি প্রকল্প রয়েছে। সব মিলিয়ে ফাইন ফুডসের প্রায় ২২১ বিঘা জায়গা রয়েছে, যা এখনো পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ২০০৭ সালে ফাইন ফুডস লিমিটেডের মালিকানা থেকে সিনহা গ্রুপের পরিবার সড়ে আসে। ফলে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারনের পরিমান নেমে আসে ১ শতাংশে। এরপর বিশ্বাস বিল্ডার্সের মো. নজরুল ইসলাম পরিচালক হন, তিনি বর্তমানে কোমাপনিটির ব্যাস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।