সিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান সংসদ সদস্যদের

সিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান সংসদ সদস্যদের

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। তারা বলছেন, এসডিজিসহ জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি, আর সেজন্য সিগারেটের ব্যবহার কমাতে বাজেটে যথাযথ উদ্যোগ থাকা বাঞ্ছনীয়।


গতকাল ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় তারা এ আহ্বান জানান। ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক এ প্রাক-বাজেট আলোচনার আয়োজন করে উন্নয়ন সমন্বয়।


সময় সংসদ সদস্যরা বলেন, এতদিন সিগারেট থেকে আসা করের দিকে নজর ছিল নীতিনির্ধারকদের। এখন থেকে সিগারেট বিক্রি থেকে আসা করের পরিমাণের চেয়ে সিগারেটের কারণে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।


সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য তারানা হালিম, অনিমা মুক্তি গমেজ, ড. আওলাদ হোসেন, ড. বীরেন শিকদার, ড. জান্নাত আরা হেনরী, নাজমা আক্তার প্রমুখ।


আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশে সবচেয়ে বেশি নিম্নস্তরের সিগারেট ব্যবহৃত হয়। দাম কম হওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ ও তরুণ-তরুণীরা এ সিগারেট বেশি ব্যবহার করে। হারের দিকে এটি ৭০ ভাগের বেশি। তাই এ সিগারেটের দাম শতাংশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি বাড়াতে হবে (প্রায় ৩৩ শতাংশ)। তাতে করে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে ১০ হাজার কোটি টাকা। এতে করে ১৫ লাখ মানুষ ধূমপান ছাড়বে ও ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে।


ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সিগারেটকে দুষ্প্রাপ্য করে দিতে হবে। যাতে করে তরুণরা এটি গ্রহণ করতে না পারে। কেননা বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ দেশে ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকদের মধ্যে ধূমপানের হার ১৮ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ২০১৮ সালে দেশে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সে বছর তামাক ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর রাজস্ব এসেছিল ২২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এটি সে বছর স্বাস্থ্যজনিত কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল তার ৭৫ শতাংশেরও কম।’


সভায় ড. আতিউর রহমান চার স্তরের সিগারেটে কর অরোপের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ‘নিম্ন স্তরে সিগারেটে খুচরা মূল্য ৪৫ থেকে ৬০ টাকা করতে হবে। বর্তমান সম্পূরক শুল্ক হার ৫৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ শতাংশ করতে হবে। মধ্যম স্তরের সিগারেটে খুচরা মূল্য ৬৭ থেকে ৮০ টাকা করতে হবে। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতো ৬৫ শতাংশ রাখতে হবে। উচ্চ স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১৩ থেকে ১৩০ টাকা করতে হবে। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতো ৬৫ শতাংশ রাখতে হবে। প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটে খুচরা মূল্য ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করতে হবে। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হার আগের মতো ৬৫ শতাংশ রাখা হোক।’


ড. আতিউর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমে আসবে। ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান ছাড়বে। এতে ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১১ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। সিগারেট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব বাড়বে ১০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। এতে করে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব হবে।’


আলোচনা সভায় উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলমের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদত হোসেন সিদ্দিকী প্রমুখ।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

টানা ৯ দিন বাংলাবান্ধায় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
হিলি দিয়ে ৩৮ দিনে এলো এক লাখ ২০ হাজার টন চাল
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কার্যকর, গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ
যুক্তরাষ্ট্রে ৭ মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ
তিন বছর পর হিলি দিয়ে টমেটো আমদানি শুরু
বেনাপোল দিয়ে চাল আমদানি শুরু, দাম কমার আশা
হিলি স্থলবন্দরে দেড় মাসে আয় ১৮ কোটি টাকা
পরিবেশবান্ধব লিড সনদ পেলো আরও ৫ পোশাক কারখানা
মার্কিন শুল্ক হ্রাসের পর স্থগিত কার্যাদেশ ফিরছে, সুবাতাস পোশাকখাতে
ঢাকায় পর্যটন মেলা ৩০ অক্টোবর