করোনার সংক্রমণ রোধে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি শুরু হয়। এর আগের দিন ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রফতানি খাতের শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তবে এপ্রিল-মে-জুনের বেতন দিতে এ ৫ হাজার কোটি টাকার বাইরে আরো আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। মোট সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার এ ঋণ দেয়া হয় মাত্র ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে। এরপর জুলাইয়ের বেতন পরিশোধে সরকার ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার আরেকটি প্যাকেজ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেয়া হয় রফতানমুখী খাতকে। এ ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সুদহার ৯ শতাংশ, যার মধ্যে গ্রাহক দেবে সাড়ে ৪ শতাংশ, বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার। তিন দফায় নেয়া এ ঋণের মধ্যে প্রথম দুই দফায় নেয়া সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ঋণের গ্রেস পিরিয়ড, কিস্তি ও পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ও রফতানি অব্যাহত রাখতে প্রণোদনা হিসেবে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয়, যা গত ২ এপ্রিল জারি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন শুরু হয়। ওই সার্কুলারে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ দুই বছরে মোট ১৮টি সমান কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের জন্য নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্রেতা কর্তৃক ক্রয় আদেশ বাতিল, স্থগিত, নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পাওয়াসহ নানা কারণে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ সম্ভব হবে না জানিয়ে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছর করা এবং দুই বছরে ১৮ কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের পরিবর্তে পাঁচ বছরে ৬০ কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের সুযোগ চেয়ে আবেদন করে। তাদের এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিষয়টি অর্থ বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক এ প্রসঙ্গে বলেন, সামনে করোনার সেকেন্ড ওয়েব আসছে, আমরা জানি না আগামীতে কী অবস্থা হবে। সব বায়ার এখন অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে। অলরেডি অক্টোবর মাসে আমাদের ৫ দশমিক ৮৬ ভাগ রফতানি কম হয়েছে। এদিকে ইংল্যান্ড আবার লকডাউনে চলে গেছে। আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের দোকানপাটসহ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে আমরা করবটা কী? এগোব কী করে? তাই এ খারাপ সময়ে আমরা চাই রফতানিকারকদের সহযোগিতার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে যে সুপারিশ পাঠিয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হোক।
করোনার পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক খাতের মালিকরা। এর আগেও বিভিন্ন সময় সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধা পেয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এসএমইসহ অন্যান্য অনেক খাত যেখানে করোনাকালে সরকার ঘোষিত প্যাকেজের সুবিধা পাচ্ছে না, সেখানে এককভাবে একটি খাতকে ঋণ পরিশোধের সময়কালে এমন ছাড় দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে বলেন, দুই বছরে এ ঋণ পরিশোধ করাটা কঠিন হবে। তাই ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় বাড়ানো যায়। তবে সেক্ষেত্রে শুধু ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ না রেখে সুদহার কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। কারণ ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে সময় বাড়ানোটা সরকারের জন্য এক্সপেনসিভ হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি গার্মেন্টস সেক্টর কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ এ সেক্টর হয়তো স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যাবে। তাহলে তো এটার আর দরকার হওয়া উচিত নয়। আমি মনে করি, এসএমইসহ অন্যান্য খাতে ঋণে পরিশোধে সময় বাড়ানো উচিত হবে।