সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শোর ক্যাপ হোল্ডিংসের কোম্পানি সচিব মুহম্মদ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালে নিবন্ধিত কোম্পানি শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেড। ২০১৫ সালের জুন মাসে কোম্পানিটি এসএস স্টিল লিমিটেডের ৯৯ লাখ ৯১ হাজার প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় করে। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ছয়টি চেকের মাধ্যমে ওই বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে শেয়ারের মূল্য হিসাবে ৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর আরজেএসসির মাধ্যমে এসএস স্টিল লিমিটেডের শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে এসএস স্টিলের শেয়ার হোল্ডিংয়ের তথ্যেও শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেড-এর নামে ওই শেয়ার দেখানো হয়।
২০১৮ সালে পুঁজিবাজারের আইপিও প্রসপেক্টাসে ‘শোর ক্যাপ’ শব্দ দুটিকে একসাথে করে ‘শোরক্যাপ’ ও হোল্ডিংস-এর এস অক্ষর বাদ দিয়ে হোল্ডিং করা হয়। এ বিষয়ে আপত্তি করলে এসএস স্টিল এটাকে টাইপিং মিসটেক বলে দাবি করে। তারপরও ২০১৮ সালের রিটার্নে আরজেএসসিকে ম্যানেজ করে এসএস স্টিলের শেয়ার হোল্ডিংয়ের তথ্যে (ফরম ১০) নতুন সৃষ্ট জালিয়াত কোম্পানি শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড-এর নামে ওই প্লেসমেন্ট শেয়ার দেখানো হয়।
তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ জুন জালিয়াতির উদ্দেশ্যে আরজেএসসিকে প্রভাবিত করে প্রায় একই নামে শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড এর নিবন্ধন নেয়া হয়। ওই কোম্পানিটির দুজন পরিচালকের একজন জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেনের আত্মীয় হাসনা অপগ্যানহ্যাপেন, অন্যজন এসএস স্টিলের স্বতন্ত্র পরিচালক সাদাত রহমান। অথচ ২০১৯ সালে জন্ম নেওয়া শোরক্যাপ হোল্ডিংয়ের নামে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বিও অ্যাকাউন্ট খোলে একটি ব্রোকারেজ হাউজে। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর নিজ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে শেয়ার হস্তান্তরের জন্য এসএস স্টিলকে চিঠি দেয় শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেড। কিন্তু কোম্পানিটি সেই চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি। এ বিষয়ে বিএসইসি, সিডিবিএল, ডিএসই ও সিএসইর হস্তক্ষেপ চায় কোম্পানিটি। এরপর এসএস স্টিলের পক্ষ থেকে শোর ক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেডের বদলে কাছাকাছি নামের শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড-এর শেলটেক ব্রোকারেজে থাকা অন্য বিও অ্যাকাউন্টে ওই শেয়ার হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেনের জালিয়াতির ঘটনায় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি শোরক্যাপ হোল্ডিংয়ের নামে থাকা বিও অ্যাকাউন্টে এসএস স্টিলের ৯৯ লাখ ৯১ হাজার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গত ১৫ জানুয়ারি শোরক্যাপ হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে আইনজীবীর মাধ্যমে কোম্পানি সচিব ওই রিট আবেদন করেন। আবেদনে এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, কোম্পানি সচিব মোস্তাফিজুর রহমানসহ নামসর্বস্ব কোম্পানির পরিচালক হাসনা অপগ্যানহ্যাপেন, সাদাত রহমান, রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার হস্তান্তরে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
সংবাদ সমেম্মলনে কোম্পানি সচিব মুহম্মদ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ ও বিএসইসির হস্তক্ষেপে শেয়ার বিক্রি-হস্তান্তর করতে পারছে না জালিয়াত কোম্পানি শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড। এবার উচ্চ আদালতের আদেশের পর শোর ক্যাপ হোল্ডিংসের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মি. সত্য রঞ্জন মন্ডলকে না জানিয়ে গত ২০ জানুয়ারি চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেছে শোরক্যাপ হোল্ডিং লিমিটেড। সত্য রঞ্জন মন্ডলের অনুপস্থিতিতে শুনানি শেষে উচ্চ আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। আইন ভেঙে আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
সংবাদ সমেম্মলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শোর ক্যাপ হোল্ডিংসের কোম্পানি সচিব মুহম্মদ মাজাহারুল ইসলাম। অন্যদেরও মধ্যে কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ম্যানেজার মনিরুজ্জামান রাসেল, বিক্রয় বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম খান ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।