ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ঋণ নিচ্ছেন; কিন্তু তা ফেরত দিচ্ছেন না। বছরের পর বছর আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে ব্যাংক দ্বারস্থ হয় আদালতে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়; কিন্তু সহসাই এসব মামলা নিষ্পত্তি হয় না। বছরে পর বছর ঝুলে থাকে।
জানা গেছে, ঋণখেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন করে ঋণ নিতে পারে না। এমনকি তারা কোনো জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলো তাই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু কিছু বড় ঋণখেলাপি ঋণ পরিশোধ না করতে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে দেখা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ না করলেও ব্যাংক যাতে তাদের ঋণখেলাপি বলতে না পারে সে জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিট করেই আবার নতুন করে ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদন করেন গ্রাহক। তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়া আবলম্বন করে ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ বের করে নেন। ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হয়েও আইনের ফাঁক গলিয়ে নতুন করে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করেন না। আবারো ঋণখেলাপি হন। এভাবেই বছরের পর বছর একশ্রেণীর ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করছে না। ব্যাংক অনেকটা নিরুপায় হয়ে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করে; কিন্তু আদালত-স্বল্পতার কারণে আবার ওই মামলাও বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এভাবেই আদালতে মামলার পাহাড় জমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে মামলার হালনাগাদ প্রতিবেদন করা হয়েছে গত জুনভিত্তিক তথ্য নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, লক্ষাধিক মামলা আছে বিভিন্ন আদালতে। এতে আটকে আছে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা রয়েছে ৬৪ হাজার ৮৩২টি। এর বিপরীতে আটকে রয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ১১২ কোটি টাকা।
ব্যাংকভেদে মামলা রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এখন ১৯ হাজার ১৪১টি। এসব মামলার বিপরীতে দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হলো ৫৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে দুই হাজার ৯৫টি। এতে দাবিকৃত টাকার পরিমাণ হলো ছয় হাজার ৫০৫ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। বেসকরারি ব্যাংকগুলোতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৩১ হাজার ৫৮৬টি। এর বিপরীতে দাবিকৃত অর্থ রয়েছে ৬৩ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। অপর দিকে ৯ বিদেশী ব্যাংকের বিচারাধীন মামলা রয়েছে সাত হাজার ৬০০টি। এর বিপরীতে দাবিকৃত টাকার পরিমাণ রয়েছে দুই হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।
অর্থসংবাদ/ এমএস