জানা যায়, ‘বিভিন্ন দেশে পাচারকারী বাংলাদেশিদের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের মানি লন্ডারিং বিভাগের মহাপরিচালক আ ন ম আল ফিরোজ। পাঠানো চিঠিতে বিনিয়োগকারী হিসেবে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য বা তালিকা দূতাবাসের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো উপায়ে সংগ্রহের কথা বলা হয়।
দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। এ ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই।
চিঠিতে বলা হয়, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিং, হুন্ডি, বাল্ক ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়। এতে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য যে পরিমাণ দেশীয় বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থ পাচার রোধ করা একান্ত প্রয়োজন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশের আইন অনুসারে সরকারিভাবে এসব তথ্য দেওয়ার সুযাগ অত্যন্ত ক্ষীণ। বেশির ভাগ দেশেই এ সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখার বিষয়টি আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরও দুদকের চিঠির সূত্র ধরে কানাডা ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে। এরই সূত্র ধরে অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন তথ্য আসতে শুরু করেছে। তবে তথ্য সংগ্রহের কাজ আরও চলবে। প্রয়োজনে অনানুষ্ঠানিকভাবে অন্যান্য দেশের তথ্যগুলোও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর সঙ্গে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও।পাচার হওয়া এসব অর্থের বড় অংশই ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ। বাংলাদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার নজিরও রয়েছে।তাই দুদক প্রথমে বিদেশে পালিয়ে থাকা পাচারকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে চাই। উদ্ধার করতে চায় অর্থ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) মার্চে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। ২০১৫ সালে ৯৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। এ ছাড়াও গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
অর্থপাচার রোধে দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআর, সিআইডি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করে থাকে। তবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সংস্থাগুলোর নেই তেমন সফলতা। শুধুমাত্র দুদক ২০১২ ও ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ। তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা ২১ কোটি টাকারও বেশি ফেরত আনা হয়।তবে এই উদ্যোগ সফল হতে অনেক সময় লাগবে বলে মনে করেন আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা।
অর্থসংবাদ/এ এইচ আর ১১:৪২/ ১১:৩০:২০২০