করোনাকালে বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভালো। মাথাপিছু প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় বাংলাদেশ যে অবস্থানে রয়েছে, তা আপাতত স্বস্তির।তবে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়ছে, এটি হতাশার। ৪০ ভাগ মানুষের হাতে টাকা নেই। নগদ টাকার প্রবাহ না বাড়াতে পারলে বিপর্যয় দেখা দেবে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে এমনটিই জানাচ্ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. ইব্রাহিম খালেদ।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ আপাতত ভালো। ভারতের তুলনায় এখানকার মাথাপিছু প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এ বছর। কিন্তু এর ভিন্ন আলোচনাও আছে। প্রথমত, ভারতে বিপুল জনগোষ্ঠী। দ্বিতীয়ত, সেখানে অতিধনীর সংখ্যাও যেমন আছে, অতিগরিবের সংখ্যাও তেমন আছে। যে কারণে গড় করলে ভারতের সূচক নিম্নগামী হয়। বাংলাদেশেও তাই। তবে ভারতের তুলনায় লোক সংখ্যা হওয়ায় সূচক অত নিম্নগামী হয় না।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পৃথিবী কোথায় গিয়ে থমকে যাবে, তা বলার সময় আসেনি। অথবা পৃথিবীর গতি কী হবে তাও বলা যাচ্ছে না। মানুষ মহামারি মোকাবিলা করছে বেঁচে থাকার জন্যই। আর অর্থনীতিকেও গতিশীল রাখছে বাঁচার জন্যই। একটি বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে আমরা জীবন পার করছি।
দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। আয় বেশি ও জনসংখ্যা কম থাকার কারণে এই দেশ দুটি এগিয়ে। তবে করোনাকালে তাদেরও থমকে যেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাবেক ডেপুটি গভর্নর মনে করেন, রেমিটেন্স ও রিজার্ভে বাংলাদেশ যে রেকর্ড গড়েছে, তা সুখের খবর দিচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে এটি ক্ষণস্থায়ীও হতে পারে, যদি না আমরা প্রবাসী শ্রমিকদের বাজার প্রশস্ত করতে না পারি।
দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এটি আমাদের জন্য আরেকটি বিপদের কথা । এ বিষয় জাতিসংঘ বলছে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার হার দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশ। করোনার আগে ছিল ২০ শতাংশ। এই সূচক অবশ্যই আগামীর জন্য চ্যালেঞ্জের। সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে । তা না হলে করোনার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে।
এই করোনাকালে অর্থনীতি সচল হলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লাগার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে সেসব দেশে চাহিদা কমবে। বেসরকারি বিনিয়োগও তেমন হচ্ছে না। উৎপাদন খাতে চাঞ্চল্য নেই। অভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমেছে।