যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজি পালানোর পাঁয়তারা করেন। তার এই গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়। সে সময় স্বীয় দুর্বলতা ঢাকার জন্য নিয়াজি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভভরে বলেন, কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা, আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনও আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না। এদিন গভর্নর মালিকের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মুখ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানের অফিসার মুজাফফর হোসেন ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে ‘আত্মসমর্পণের’ আবেদন হস্তান্তর করেন। এই আবেদন ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি পল মার্ক হেনরির হাতে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি মহলে বার্তাটি মালিক-ফরমান আলী বার্তা হিসেবে পরিচিতি পায় ।
১৯৭১ সালে ধ্বংসযজ্ঞ শেষে ৮ ডিসেম্বর যখন পাক হানাদার বাহিনী মাদারীপুর ছেড়ে যাচ্ছিল তখন মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক দিয়ে এই ব্রিজটি উড়িয়ে তাদের আটকে দেয়। এরপর টানা ৩ দিনের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী, পাকিস্তানী সেনাদের কোণঠাসা করে আত্মসমর্পণ করাতে বাধ্য করে। কিন্তু ৩ দিনের সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন জেলার সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ১৪ বছর বয়সী সারোয়ার হোসেন বাচ্চু। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার আগে পশ্চিম আকাশে সূর্য যখন অস্তগামী তখনই মুক্ত হয় মাদারীপুর।
২৭ মার্চ থেকে ময়মনসিংহে ইপিআর, পুলিশ এবং আনসার-মুজাহিদ বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্যরা খাগডহর এলাকার তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প দখলে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ময়মনসিংহ অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর হাতে থাকলেও পরে তা চলে যায় পাক সেনাদের হাতে। এরপর খণ্ড খণ্ডভাবে যুদ্ধ হলেও ৩ ডিসেম্বর থেকে ময়মনসিংহের চতুর্দিক ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধারা। ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাস্ত হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায় পাক সেনারা।
১২ এপ্রিল থেকে দোসরদের সহযোগিতায় ভোলার বিভিন্ন জায়গায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাকবাহিনী। দীর্ঘ ৮ মাসের যুদ্ধ শেষে ১০ ডিসেম্বর মুক্ত হয় ভোলা জেলা। মুক্ত মাতৃভূমিতে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে ভোলা জেলার মানুষ।
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে নড়াইলে অবস্থান নেয়ার পর গণহত্যা শুরু করে পাকবাহিনী। এসময় জেলার অস্ত্রাগারের তালা ভেঙ্গে অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে মুক্তিযোদ্ধারা। আস্তে আস্তে হানাদার বাহিনীর সবগুলো ঘাটি দখলে নেয় তারা। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে গেরিলা আক্রমণের মধ্যদিয়ে শত্রুমুক্ত হয় নড়াইল জেলা।
ও সৈয়দপুরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যৌথবাহিনী এই তিন শহরের মধ্যে রংপুর ও দিনাজপুর জেলা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করে। রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জামালপুর গ্যারিসন ছেড়ে পালিয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। তারা ঢাকার কাছে এসে মিত্রবাহিনীর মুখামুখি হয়। এখানে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে প্রায় এক হাজার ৫০০ পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। এদিন দিবাগত রাতে আল-বদর বাহিনীর গুপ্তঘাতক দল দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজউদ্দিন হোসেন ও পিপিআই’র প্রধান প্রতিবেদক সৈয়দ নাজমুল হককে তাদের বাসভবন থেকে অপহরণ করে। পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।