বিচারহীনতার সংস্কৃতির থেকে মুক্তিই হলো স্বাধীনতা
অর্ণব হাসান, লোকপ্রশাসন বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতা নয়, এটি মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার ও সম্মানের স্বাধীনতা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি একটি রাষ্ট্রের ন্যায়বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, সমাজে ভীতি ও অস্থিরতার জন্ম দেয়। যেখানে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয় না, সেখানে নিরপরাধীর নিরাপত্তাও থাকে না। এ অবস্থা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে অবস্থান করে। জ্যঁ-জাক রুশো বলেছেন, ‘Freedom is the power to choose our own chains.’ কিন্তু বিচারহীনতার সংস্কৃতি সেই শৃঙ্খল আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই অর্জিত হয়, যখন রাষ্ট্র বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা তৈরি করতে পারে এবং সকলের জন্য সমান ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে তখনই, যখন আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেয়ে একটি সুবিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব।
চেতনার প্রতীক ২৬শে মার্চ
জান্নাতি জাহান, সমাজ কল্যাণ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
২৬ শে মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবের প্রতীক। যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বাঙালি অন্যায়, অবিচার, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বদা আপোসহীন। স্বাধীনতা দিবস এলেই আমাদের মনে পড়ে সেই সব বীর শহীদদের কথা, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ভূখণ্ড, বাঙালি হিসাবে আলাদা পরিচয়। এই জাতীয় দিবসগুলো আমাদের শুধু অতীতের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় না আদর্শ সমৃদ্ধ দেশ গড়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য মনে করিয়ে দেয়। নতুন বাংলাদেশে আমার প্রত্যাশা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে, স্বাধীনতার চেতনা লালন করে, আদর্শ দেশপ্রেমী হয়ে দেশের সমৃদ্ধি, উন্নয়ন, কল্যাণের জন্য কাজ করা। ব্যক্তির স্বার্থকে বড় করে না দেখে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। দেশকে ভালোবেসে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা। দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করা। বাংলাদেশকে বিশ্বমানের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করা। স্বাধীনতা দিবসে ১৯৫২ থেকে ২০২৪ এর সকল বীর শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি আদর্শ, সুন্দর, সকলের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ কামনা করি।
স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও ঐক্যবদ্ধতা
ইব্রাহীম খলিল, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সশস্ত্র যুদ্ধের শুরু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমাদের গৌরবময় অর্জন। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে এর সুরক্ষা আরও বেশি কঠিন। স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও একতা। সচেতন জনগণ নিজেদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ থাকে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নিবেদিত থাকে, যা স্বাধীনতার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। সর্বোপরি, জাতির মধ্যে ঐক্য থাকলে স্বাধীনতা কখনো বিপন্ন হয় না। আমরা প্রত্যাশা করি বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো বিভেদ, হানাহানি ও স্বার্থপরতার রাজনীতি না করে সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও ঐক্যবদ্ধতার রাজনীতি করবে। কারণ বিভেদ, হানাহানি ও স্বার্থপরতা স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই ২৬ মার্চ শুধু স্বাধীনতা অর্জনের সশস্ত্র যুদ্ধের শুরুর নয়, বরং এ দিনটি আমাদের সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও একতার শপথ নেওয়ার দিনও বটে।
নিরাপত্তাহীনতা: নতুন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ
মোসাদ্দেক হোসেন, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ডাক পড়ে ৩৬ জুলাই। বাংলাদেশের মানুষের মাথার উপর থেকে কষ্টের ভার পতিত হয় ভারতে গিয়ে আশ্রয় মাধ্যমে। এরপর থেকে আমজনতা স্বস্থিতে নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করলেও আজ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তাহীনতা সে স্বস্থিটুকু কেড়ে নিয়েছে। একটি মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে কাজে যাচ্ছে, এরপর ঘরে ফিরতে পারবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, সহিংসতার দৌরাত্ম্য যেনো কঠিন বেগে চলছে। অপরাধারীরা দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। আর মূল অপরাধীরা যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো পরিপূর্ণভাবে মানুষের সেবার কাতারে দাঁড়াতে পারে নি। পত্রিকার কাগজ উল্টালেই প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে শিশু ধর্ষণ, সন্তানের সামনে বাবার খুন, মা তার ছেলের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন , ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণবিনাশ। সরকার মিডিয়ার সামনে কঠিন হাতে সন্ত্রাস, ধর্ষণ দমন করতে চাইলেও সম্ভব হচ্ছে না। এ সম্ভব না হওয়ার মূল কারণ হলো অপরাধীদের পিছনে রাজনৈতিক রাঘববোয়ালদের হাত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি অপরাধীকে শাস্তির জন্য গ্রেফতারও করে কিন্তু নেতার চাপে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরপর সে অপরাধী আরো কঠিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমরা ২৪ এর অন্দোলন পরবর্তী সময়ে এরকম বাংলাদেশ কল্পনা করিনি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে নেতাদের আশ্রয়ে অপরাধীরা বেঁচে যেত। মানুষ পাল্টিয়েছে, ক্ষমতার হাত বদলিয়েছে কিন্তু এদের চরিত্রগুলো ফাসিস্ট এর শূণ্যস্থান পূরন করেছে। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর আর এসব হুমকির মধ্যে থাকতে চাই না। রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা চাই। এখনই মোক্ষম সময় অপরাধীদের দ্রুত বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোক জনতার সেবক, কোনো রাজনৈতিক দলের পাঠার বলি না হোক। জনগণের প্রতি তাদের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন নিরাপত্তার সাথে চলতে পারে, নিরাপত্তার সাথে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে এটাই নতুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের চাওয়া। নিরাপত্তার চাদরে আবৃত্ত থাকুক সকল সাধারণ নাগরিক জনতা।
আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ
জাবিন তাসমিন,সমাজ কল্যাণ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
আমার চোখে বাংলাদেশ হবে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, ও সমৃদ্ধ দেশ। যেখানে সবাই ন্যায্য অধিকার উপভোগ করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও মৌলিক চাহিদা সবার জন্যে সহজলভ্য হবে। কেউ টাকা আর অসহায়ত্বের কারণে বিনা চিকিৎসায় মরবে না। দুর্নীতি আর বৈষম্যের জায়গা থাকবে না, সব শ্রেণীর মানুষের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। কর্মসংস্থানের অভাব থাকবে না। কৃষি, প্রযুক্তি ও শিল্পের সমন্বয়ের দেশে এগিয়ে যাবে। নারী-পুরুষ সমানভাবে সমাজে অবদান রাখবে। আমি এমন এক বাংলাদেশ চাই যেখানে, কৃষক তার ন্যায্য দাম পাবে এবং শ্রমিক তার পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পাবে। আইন শৃঙ্খলা মজবুত হবে। নারী ও শিশুরা চলবে নির্ভয়ে অপরাধীরা শাস্তি পাবে সৎ মানুষেরা মাথা উঁচু করে বাঁচবে। সবার জন্য নিরাপদ সমাজ করে উঠবে।
আমি এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে সাফল্য মানে শুধু নিজের উন্নতি নয় সমাজে সবার উন্নতি। সমাজে কেউ অসহায় ও অবহেলিত থাকবে না। কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, সবার বাসস্থান নিশ্চিত হবে; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা হবে সবার অধিকার। গ্রামের শিশুরাও পাবে উন্নতমানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। তরুণরা নতুন নতুন আবিষ্কার করবে। আমি এমন একটা দেশ চাই, যেখানে দেশের সম্পদ কেবল কিছু মানুষের হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং সবার কল্যাণে কাজে লাগবে, মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে ধর্ম-বর্ণ -শ্রেণী ভেদাভেদ ভুলে। চব্বিশের সূচনায় এক নতুন ধারায় বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন হয় সেই প্রত্যাশা থাকবে।
অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম