আ.লীগের এমপিকে হাতিয়ার করে সীমান্তে অবৈধ ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন অনুমোদন

আ.লীগের এমপিকে হাতিয়ার করে সীমান্তে অবৈধ ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন অনুমোদন

জ্বালানী তেল বিক্রয়ের লক্ষ্যে সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রকার ফিলিং স্টেশন স্থাপন করা যাবে না। বাংলাদেশ সরকারের গেজেটে জারিকৃত এমন আইন থাকা সত্ত্বেও বিপুল অর্থের বিনিময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় মাত্র ২.৪ কিলোমিটারের মধ্যে জ্বালানী তেল বিক্রয়ের লক্ষ্যে ‘মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন’ নামে অবৈধভাবে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-০২ এর সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মু. জিয়াউর রহমানকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড হতে অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন এমপি মু. জিয়াউর রহমান। তখন তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন।


সূত্র জানায়, সাবেক এমপি মু. জিয়াউর রহমান মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের স্বত্তাধিকারী মো. আব্দুল লতিফের সঙ্গে মোটা অংকের অর্থের চুক্তিতে এই অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করে দেন। সে সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে থাকায় এমপির জন্য এই অসাধ্য কাজটি করা সম্ভব হয়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করে দেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমপি সরাসরি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে গিয়ে হুমকি ও তার পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তীতে মালিক আব্দুল লতিফ অর্থ প্রদানের চুক্তিতে বিভিন্ন দফতর হতে অবৈধ এনওসি বা অনুমোদন লাভ করে।


এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের স্বত্তাধিকারী মো. আব্দুল লতিফ অর্থসংবাদকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে স্বাক্ষাতে কথা বলবো। আমি মোবাইলে বক্তব্য দেই না।


যমুনা ওয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কুদরত-ই-ইলাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকবার তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


আইন অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ফিলিং স্টেশনটি সীমান্তের শূন্য লাইন হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা যাবে না। এবিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ গেজেট জারি করা হয়। যা জ্বালানী তেল বিক্রয়ের লক্ষ্যে নতুন ফিলিং স্টেশন/সার্ভিস স্টেশন স্থাপনে ডিলার নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা (সংশোধিত), ২০১৪ অনুযায়ী মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনটি অবৈধ। ২০১৪ সালের সরকারি গেজেটে বিপিসি কর্তৃক কোন নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার পর বিপণন কোম্পানীগুলো কর্তৃক বেশকিছু শর্তসমূহ প্রতিপালন করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রস্তাবিত ফিলিং স্টেশনটি সীমান্তের শূন্য লাইন হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা যাবে না। তবে আইনভঙ্গ করে, বিপুল অর্থের বিনিময়ে ও প্রভাব খাটিয়ে যমুনা ওয়েল কোম্পানী লিমিটেড হতে ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের অবৈধ অনুমোদন নেওয়া হয়।


এছাড়া, এরআগে বিপিসির সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কর্তৃক সারাদেশে ফিলিং স্টেশনের কিছু ডিলারের বিরুদ্ধে ভেজাল ও পরিমাপে কম তেল সরবরাহের অভিযোগে নতুন ফিলিং স্টেশন/সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ রাখে সরকার।


বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ভেজাল তেল ও পরিমাপে কম সরবরাহের কারণে ভোক্তা সাধারণ প্রতারিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও, দেশের প্রত্যন্ত বা বিভিন্ন স্থানে নতুন ডিলার নিয়োগের আবেদন পাওয়া যাচ্ছে এবং পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কর্তৃক ডিলার নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় আরো নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপিত হলে ভেজাল রোধ ও সঠিক পরিমাপে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা দূরূহ হবে। বিপিসি ও এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানী কর্তৃক জ্বালানি তেল বিপণন ব্যবস্থায় ভেজাল রোধে ও সঠিক পরিমাপে জ্বালানি সরবরাহে কার্যকর্মী জরুরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা না পর্যন্ত নতুন কোন ফিলিং স্টেশন বা সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন আপাতত বন্ধ থাকবে। অথচ এমন আদেশ থাকলেও আইন বর্হিভূতভাবে মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের অনুমোদন দেওয়া হয়।


সম্প্রতি তদন্ত পূর্বক অবৈধ, দুর্নীতি ও বিপুল অর্থের বিনিময়ে আইন বর্হিভূতভাবে অনুমোদিত ফিলিং স্টেশনটির অনুমতি বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বারবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।


চিঠিতে বলা হয়, আইনভঙ্গ করে, বিপুল অর্থের বিনিময়ে ও প্রভাব খাটিয়ে ভোলাহাট উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সীমান্ত এলাকায় ২.৪ কিলোমিটারের মধ্যে ‘মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশন’ নামে যমুনা ওয়েল কোম্পানী লিমিটেড হতে অবৈধ অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সাবেক এমপি মু. জিয়াউর রহমান মেসার্স ভোলাহাট ফিলিং স্টেশনের স্বত্তাধিকারী মো. আব্দুল লতিফের সঙ্গে মোটা অংকের অর্থের চুক্তিতে এই অবৈধ অনুমোদনের ব্যবস্থা করে দেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেই নতুন কোন ফিলিং স্টেশন অনুমোদনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কিন্তু উল্লিখিত নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়েই ফিলিং স্টেশনটি অনুমোদন করে।


বিষয়টি তদন্ত পূর্বক অবৈধ, দুর্নীতি ও বিপুল অর্থের বিনিময়ে আইন বর্হিভূতভাবে অনুমোদিত ফিলিং স্টেশনটির অনুমতি বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।


অর্থসংবাদ/এসএম/কাফি

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব
জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা
এনসিপিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক নিতে চিঠি দেবে ইসি
শর্ত পূরণ করেছে এনসিপিসহ দুটি দল: ইসি
স্ত্রীসহ সাবেক এমপি আলী আজমের বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক
ফ্যাসিস্ট শক্তি মোকাবিলা করা বড় চ্যালেঞ্জ: আইজিপি
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আজ
দূষিত বায়ুর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়
আজ বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
বাংলাদেশে হিন্দুবিদ্বেষী কোনো সহিংসতা নেই: প্রধান উপদেষ্টা