করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সরবরাহে চ্যালেঞ্জ
আনসারী: করোনা পরিস্থিতির প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক ছিল। বাংলাদেশে আতঙ্কে ছিল খাদ্য প্রাপ্তি নিয়ে। কারণ, যখন চারদিকে সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন আটকে যাচ্ছে মানুষ। আমাদের দেশে অনেক খাদ্য শস্য বাহির থেকেও আসে, এটাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। লকডাউন যখন শুরু হল তখন দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেল। মানুষের মুভমেন্টও আটকে গেল। কিন্তু আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারকে জানালাম যে, যদি খাদ্য উৎপাদন না হয়, খাদ্য সরবরাহ না হয়, তাহলে খাদ্য প্রাপ্তি হবে কীভাবে? এটাকে চালু রাখতে হলে খাদ্য উৎপাদনের সাথে যে সমস্ত ফুড ও ওষুধ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি আছে এগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তখন সরকার এই বিষয়গুলো আমলে নেয় এবং ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হতে থাকে।
[caption id="attachment_41639" align="alignnone" width="800"] সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে ড. এফ এইচ আনসারী/ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]
কৃষিখাতে বড় চ্যালেঞ্জ
আনসারী: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গত মার্চের শেষের দিকে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে মাঠ ভরা ধান ছিল। দেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল ধানে ভরা ছিল। ধান যদি সময় মতো হারভেস্ট না হয়, তা হলে সমস্ত ধান বর্ষায় নষ্ট হয়ে যাবে। অথবা বন্যাতে নষ্ট হয়ে যাবে। অথবা ইঁদুরে খেয়ে ফেলবে। তাই তখন আমরা সরকারের নির্দেশে ১ হাজারেরও বেশি কম্বাইন হারভেস্টার আমরা এক মাসে সরবরাহ করলাম। সরকার প্রণোদনাও দিলো ৭০ শতাংশ বা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এক মাসের মাথায় আবার ওয়ার্কারদের মুভমেন্টের জন্য সরকার বাস ট্রেন চালু করে দিল। এক মাসের মাথায় ধানসহ ফসল উঠে আসলো। ধান, সবজি, মুরগি, দুধ এবং মাংস আছে বলেই কিন্তু আমাদের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়নি।
কৃষিখাতে নীতি সহায়তা দরকার
আনসারী: এগ্রি সেক্টরক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের খেয়াল রাখা উচিত যে, সবজির বাজারে দেখা যায় ৯০ শতাংশ বেসরকারি সেক্টর সাফ্লাই করে। তার মধ্যে ৫০ শতাংশ হলো হাইব্রিড এবং ৫০ শতাংশ হলো ইনব্রিড। এই যে হাইব্রিড আগে এক সময় ১০০ ভাগে আমদানি হতো। এখন কিন্তু ২০-৩০ ভাগ হাইব্রিডের বিজ এদেশে উদ্ভাবিত হয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে প্যাকেটজাত হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে। তার মানে প্রাইভেট সেক্টরের ক্যাপাসিটি বিল্ড হচ্ছে। যে স্পিডে হচ্ছে এটাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে।
এজন্য আমি মনে করি একটা স্পেশাল প্রণোদনা দেয়া দরকার, যেখানে সব ভালো কোম্পানি যারা সিড, সার, কীটনাশক, মুরগির খাবার, গরুর খাবার, ছাগলের খাবার, মাছের খাবার বিক্রি করে এদেরকে লোন দেওয়া উচিত। আমরা দেখতে পেলাম অনেকেই বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে লোন নেয়, এনজিও থেকে লোন নিয়ে বিভিন্ন কাজে লাগায়। আমরা যদি কৃষি উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন করতে পারি তাহলে আমাদের দেশের যুবক তরুণ ছেলে-মেয়েরা কিন্তু কৃষি উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন থেকে লোন নিতে পারবে । এ লোনগুলো নিয়ে তারা তাদের কর্মসংস্থান করতে পারে এবং টাকা রিটার্ন করতে পারবে। যদি এ লোন নিয়ে একটা কৃষি যন্ত্রপাতি, বীজ, সার কিনে উৎপাদন করে সেখান থেকে লাভবান হবে। মুরগির খামার , মাছের খামার করতে পারবে। এক্ষেত্রেও কিন্তু সরকারের খেয়াল রাখা উচিত।
[caption id="attachment_41640" align="alignnone" width="800"] ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: খাদ্য সরবরাহ ও প্রাপ্তিতে চ্যালেঞ্জ
আনসারী: সরকার কিন্তু কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন: উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদনের জন্য যে ইমপোর্ট লাগে, সেগুলোকে গরীব কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক ইঞ্চি জায়গা খালি রাখা হবে না। এ কথা শুনার পরে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ছোট ছোট প্যাকেটে বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করছে। ফলে যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাষি আছে তাদের পক্ষে এগুলো কিনে আবার নতুন উদ্যোগী হতে পারবে। ইতোমধ্যে দেখা গেছে, বাজারে সবজিতে ভরপুর। ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি হচ্ছে এবং যথেষ্ট দুধের সরবরাহ আছে, সবকিছু উৎপাদন ও সরবরাহ হচ্ছে। করোনার যে কোন ধাক্কা আসুক না কেন, গ্রামের মানুষ এখনও কাজ-কর্ম করছে, কেউ ঘরের মধ্যে বসে নেই। আশা করা যায় খাদ্য সরবরাহে এবং খাদ্য প্রাপ্তিতে কোন সমস্যা হবে না।
দেশের কৃষিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান
আনসারী: আমরা সেক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাচ্ছি না। আমাদের দেশে কৃষিভিত্তিক যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে এরা বিজ্ঞানী হয়েছে। তারাই উদ্যোক্তা হয়েছে। যতটা হওয়ার দরকার ততটা হচ্ছে কি না? সে অনুপাতে হওয়ার জন্য এখন এপ্রোস দেওয়া হচ্ছে । কৃষি এমন একটা সাবজেক্ট যে এটা খুব নিত্য নৈমিত্তিক চেঞ্জ হচ্ছে। ফলে ইউনিভার্সিটিতে সিলেবাসও মানসম্মতভাবে চেঞ্জ হওয়া প্রয়োজন মনে করি। তবে এর জন্যও ইউনিভার্সিটির যারা কর্তৃপক্ষ আছে সবাই চেষ্টা করছে।
[caption id="attachment_41641" align="alignnone" width="800"] ড. এফ এইচ আনসারী/ছবি: অর্থসংবাদ[/caption]
কৃষি ও টেকনোলজি
আনসারী: যে সমস্ত ইনস্টিটিউশন বা এনজিও এ কাজগুলো করে, তাদেরকে যদি কোনভাবে সাপোর্ট করা যায়, তাহলে তারা কৃষকদেরকে অনেক ফাস্ট ট্রেনিং করাতে পারবে। এটা খুব দরকার আছে। আমাদের এগ্রিকালচার সিস্টেমকে আরও একটু ফাস্ট করার জন্য অনেক বড় ফান্ড দেওয়া দরকার। যাতে করে এরা মোটরসাইকেল কিনতে পারে। মোটরসাইকেলের মুভমেন্টের জন্য তেল মবিল কিনতে পারে এবং ট্রাভেলের জন্য যে অ্যালাউন্সগুলো আসে সেগুলো পায় তাহলে অনেক ফাস্ট কাজ করবে এবং টেকনোলজি পাবে।
তরুণদেরকে কৃষিতে সম্পৃক্ত করতে এসিআই এগ্রিবিজনেসের উদ্যোগ
আনসারী: আমাদের যে যন্ত্রপাতি বিক্রি হয় গ্রামের তরুণরাই কিনছে। তারা মাঠে রোদ-বৃষ্টি এবং কাদার মধ্যেও কাজ করে এবং পাশাপাশি লেখা-পড়াও করছে। একই সঙ্গে যন্ত্রপাতি কিনে নিজের জমিতে কাজ এবং অন্যদেরকে ও সাপোর্ট দিচ্ছে। এরপরও অনেক তরুণদেরকে আমরা ট্রেনিং দিয়ে মাঠে নিয়েছি। তারা ফলের বাগান করছে, মুরগির খামার, গরুর খামার, মাছের খামার করছে। এ কাজগুলো আমরা করছি। শুধু আমরা একা নয়; অন্যান্যরাও এমনটি করছে। আমরা অনেক বেশি করি, কারণ আমাদের উদ্যেশ্য হলো- সোসাইটির মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা।