মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির এক অনন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ৫০তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সেই সব দেশ ও ব্যক্তিবর্গের প্রতি, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা, ঊনসত্তরের ১১ দফা ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি। জাতির পিতা অনুধাবন করেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার এবং তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। আমরা পাই লাল-সবুজের পতাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। স্বাধীনতাযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করে, ভূলুণ্ঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই ধারা অব্যাহত রাখে।
তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২ হাজার ৬৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কূটনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ সড়ক-রেল-নৌ বিমান যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযুক্তির অভিজাত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছি।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নারী নির্যাতন ও মাদক নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমারও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।