ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়ে ডিএসইর ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি

ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে সরাসরি পুঁজিবাজারে আসতে চায় রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ান ঢাকার পরিচালনাকারী বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদ সভায় প্রতিষ্ঠানটির তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হওয়ারও কথা রয়েছে। তবে কোম্পানিটির ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কিছু আইনি বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে ডিএসইর কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিশনের ২০১৬ সালের একটি নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারের মালিকানাধীন ব্যতীত অন্য কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের প্রভিশন কাজে লাগাতে পারবে না দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। অর্থাৎ বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কোনো বেসরকারি কোম্পানির ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আইনি সুযোগ নেই।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বেস্ট হোল্ডিংসের ৫২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ মালিকানা রয়েছে ব্যক্তি ও কিছু প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির হাতে। আর বাকি ৪৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের হাতে। এর মধ্যে সোনালী ও জনতা ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ হারে। আর অগ্রণী ব্যাংকের কাছে ৬ দশমিক ৬২ ও রূপালী ব্যাংকের কাছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এদিকে বেস্ট হোল্ডিংসের মূলধন সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে ২০১৯ মেয়াদে নিট চলতি সম্পদের ঋণাত্মক মানও ডিরেক্ট লিস্টিং-সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানের পরিপন্থী। এছাড়া যে ৪ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার কোম্পানিটি বাজারে ছাড়তে চাইছে, তা তাদের মোট শেয়ারের মাত্র ৫ শতাংশ। এটিও আইনের পরিপন্থী। কমপ্লায়েন্স পরিপালনের জন্য কোম্পানিটিকে তাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্তত ২৫ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে হবে।

চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, তিনটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে ৯৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ রয়েছে বেস্ট হোল্ডিংসের। এর মধ্যে ৬৩ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বেস্ট সার্ভিস লিমিটেডে, যা থেকে মাত্র ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার রাজস্ব এসেছে। বাকি দুটি সাবসিডিয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো রাজস্ব আয়ের হিসাব পাওয়া যায়নি।

উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বেস্ট হোল্ডিংসকে ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়ার আগে ডিএসইর কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বেস্ট হোল্ডিংসে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের যে মূলধনি বিনিয়োগ রয়েছে, তা সরকারি মালিকানা হিসেবে বিবেচনা করা হবে কিনা, লিস্টিং রেগুলেশনের ব্যত্যয়ের যে ঘটনাগুলো ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো ডিএসই কীভাবে বিবেচনা করছে, ডিএসই পর্ষদ কীভাবে রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করছে, বেস্ট হোল্ডিংসের তালিকাভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সুপারিশ-সংক্রান্ত যে চিঠির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে কোনো তারিখ ও রেফারেন্স না থাকার ফলে এ চিঠির সত্যতা ডিএসই কীভাবে যাচাই করেছে।

উল্লিখিত জটিলতাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বেস্ট হোল্ডিংসের ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের আবেদনে অনুমোদন দেয়া স্থগিত রাখতে ডিএসইর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি।

তালিকাভুক্তির আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী, বেস্ট হোল্ডিংসের বর্তমান অনুমোদিত মূলধন দেড় হাজার কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৮৭০ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। পুঁজিবাজারে মোট ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮টি শেয়ার ইস্যু করবে তারা। প্রতিটি শেয়ারের অফার প্রাইস হবে ৬৫ টাকা। এর মাধ্যমে ২৮৩ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৭ টাকার মূলধন উত্তোলনের পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা (পুনর্মূল্যায়িত)। আগের হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৮৩ পয়সা। সমাপ্ত হিসাব বছরের ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬৬ টাকা ৬৮ পয়সা।

সমাপ্ত হিসাব বছরে বেস্ট হোল্ডিংসের রাজস্ব আয় হয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা। আগের হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ৩৭৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ হিসাবে ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় কমেছে ২৫ শতাংশ। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ হিসাব বছরে তাদের আয় ছিল যথাক্রমে ১১৯ কোটি ৬০ লাখ, ২০৭ কোটি ১ লাখ ও ৩১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

গত হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির গ্রস মুনাফা হয়েছে ২১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১১৮ কোটি টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২০৬ কোটি ১৪ লাখ। গত হিসাব বছরে বেস্ট হোল্ডিংসের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৯৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৮৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে গত হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল যথাক্রমে ২ কোটি ১৬ লাখ, ৪৭ কোটি ২১ লাখ ও ১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা।

বেস্ট হোল্ডিংসের নিরীক্ষক হিসেবে রয়েছে আর্টিসান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। আর ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে রয়েছে রেস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত