ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) অনুসারে, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, এমন কোনো সংস্থা যার বার্ষিক রাজস্ব পূর্ববর্তী অর্থবছরে এফআরসির নির্ধারিত সীমার বেশি রয়েছে, এমন কোনো সংস্থা, যা পূর্ববর্তী অর্থবছর শেষে এফআরসি নির্ধারিত ন্যূনতমসংখ্যক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে বা এর মোট পরিসম্পদ এফআরসি নির্ধারিত সীমার বেশি রয়েছে কিংবা এর শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটি ব্যতীত মোট দায়ের পরিমাণ এফআরসি নির্ধারিত সীমার বেশি রয়েছে—এ তিন শর্তের যে কোনো দুটি পূরণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠান এবং যে কোনো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে গণ্য হবে।
অবশ্য আইনে এফআরসির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠানকে জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এফআরসির পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। ফলে এফআরসির প্রজ্ঞাপন জারির আগ পর্যন্ত আইনে সরাসরি যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোকেই জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
এফআরসির জারি করা গাইডলাইনে বলা হয়েছে, মূলধন খাতে প্রাপ্ত অর্থ যা শেয়ার মানি ডিপোজিট বা অন্য কোনো নামে কোম্পানির মূলধন বা ইকুইটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাহার বা ফেরত নেয়া যাবে না। এ খাতে প্রাপ্ত অর্থ সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আইনগতভাবে মূলধনে রূপান্তর করতে হবে অর্থাৎ যার কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়েছে তাকে শেয়ার ইস্যু করতে হবে। এছাড়াও মূলধনে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত শেয়ার মানি ডিপোজিটকে সম্ভাব্য শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং এ সম্ভাব্য শেয়ার বিবেচনায় নিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় হিসাব করতে হবে।
এফআরসি বলছে, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুসারে মূলধন বা ইকুইটির সংজ্ঞার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য জনস্বার্থ সংস্থাগুলোর জন্য এ গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। এ গাইডলাইন বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে এফআরএর ৪৮ ধারায় উল্লেখিত দণ্ড কার্যকর করা হবে।
এফআরএর ৪৮ ধারা অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি এ আইন বা এর অধীনে প্রণীত বিধি, প্রবিধান, গাইডলাইন, স্ট্যান্ডার্ডস বা নির্দেশনার শর্ত ভঙ্গ কিংবা অসাধু পন্থা কিংবা মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিরীক্ষক হিসেবে নিবন্ধন লাভ করে অথবা এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করে, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এজন্য অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
জানতে চাইলে এফআরসির মানদণ্ড নির্ধারণী বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ আনওয়ারুল করিম এফসিএ বলেন, শেয়ার মানি ডিপোজিটের অর্থ ফেরত নিয়ে যাওয়ার বেশকিছু ঘটনা কাউন্সিলের সামনে এসেছে। বিশেষ করে দেখা গেছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সময় ইকুইটিতে শেয়ার মানি ডিপোজিটের অর্থ দেখানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঋণ নেয়ার পর শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু না করে সেটি ফেরত নেয়া হয়েছে। কিন্তু আইএফআরএস অনুসারে এক্ষেত্রে অর্থ ফেরতের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের প্রবণতা ঠেকানোর জন্য কাউন্সিল জনস্বার্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিষয়টি পরিপালনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বলেন। তিনি আরো বলেন যদি শেয়ার মানি ডিপোজিটের অর্থের বিপরীতে কেউ শেয়ার ইস্যু করতে না চায়, তাহলে ক্ষেত্রে এটিকে মূলধন বা ইকুইটির অংশ হিসেবে না দেখিয়ে দায় হিসেবে দেখাতে হবে। তাহলে আইএফআরএস অনুসারে মূলধনের সংজ্ঞা পরিপালনে ব্যত্যয় ঘটবে না।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডকে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) অনুকূলে ২৫ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৫১ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বাড়ানোর অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কমিশনের কাছ থেকে শেয়ার অনুমোদন পাওয়ার আগে বেশ কয়েক বছর ধরেই তারা এ অর্থ শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে আর্থিক প্রতিবেদনে দেখিয়ে আসছিল। এমনকি সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে ডিপোজিট ফর শেয়ার হিসেবে ৫ হাজার ৭১ কোটি টাকা দেখিয়েছে পাওয়ার গ্রিড। এফআরসির নির্দেশনা অনুসারে ছয় মাসের এ অর্থের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতে হবে।