মতিয়ার রহমানের মতো দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় সব বাংলাদেশীরই এখন দিন কাটছে আতঙ্কে। দেশে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা। অনেকে এরই মধ্যে ফিরেও এসেছেন।
বাংলাদেশীদের মধ্যে এ আতঙ্কের প্রধান কারণ একদিনের ব্যবধানে দুই বাংলাদেশীর নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর। আক্রান্ত দুজনই একে অন্যের সংস্পর্শে ছিলেন বলে জানা গেছে। দুজনই এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে দুজনেরই বয়স ৩৯ বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে একজনকে সাধারণভাবে চিকিৎসা দেয়া হলেও আরেকজনকে রাখা হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সিঙ্গাপুর সরকার তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। এ নিয়ে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশী দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে দেশটির সরকার।
জানা গেছে, এরা দুজনই সিঙ্গাপুরের বীরাস্বামী এলাকায় থাকেন এবং সেলেটার অ্যারোস্পেস হাইটসে কাজ করতেন। আর ওই দুজনের সংস্পর্শে ছিলেন এমন ১৯ জনকেও কোয়ারান্টাইনে রেখেছে সিঙ্গাপুর সরকার। এর মধ্যে ১০ জনই বাংলাদেশী।
এ বিষয়টিই আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় চার লাখ বাংলাদেশী শ্রমিককে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মোস্তফা সেন্টার ও আশপাশ এলাকায়। স্থানটি বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাছে মোস্তফা প্লাজা নামে পরিচিত। মোস্তফা সেন্টারের আশপাশ এলাকাগুলোর মধ্যে রবার্টস লেন, সৈয়দ আলাওয়ি রোড, রয়েল রোড, কেজি কাপুর রোড, সিরাংগংসহ কয়েকটি এলাকায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। তবে নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এখন ওইসব এলাকা এড়িয়ে চলছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)চীনের পর এখন সিঙ্গাপুরের দিকেও বেশ সতর্ক নজর রাখছে। ঢাকায় দেশটি থেকে আসা ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানও (আইইডিসিআর) এখন সতর্ক অবস্থানে। সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল জানান, ডব্লিউএইচও এখন চীনের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের প্রতি নজর দিচ্ছে বিশেষ কারণে। আর যেহেতু সেখানে বাংলাদেশীরা শনাক্ত হয়েছেন, তাই আমরা সেখানে বিশেষ নজর রাখছি।
সাম্প্রতিকালে সিঙ্গাপুর থেকে আসা বা যারা এখনো আসছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, তারা যেন যথাসম্ভব নিজেদের ঘরের মধ্যে থাকেন। বিশেষ করে যদি কেউ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে এসে থাকেন, তাহলে তিনি যেন হোম বা সেলফ কোয়ারান্টাইনে থাকেন।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক বাংলাদেশী। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৪৯ হাজার ৮২৯ বাংলাদেশী বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ সালে ৪১ হাজার ৩৯৩ জন, ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ৪০১, ২০১৬ সালে ৫৪ হাজার ৭৩০ ও ২০১৫ সালে ৫৫ হাজার ৫২৩ জন বাংলাদেশী শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমান।