মোবাইল ডিভাইস ও গাড়ি নির্মাতারা চিপ সংকটের কথা তুলে ধরে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। যে কারণে মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ এর ধাক্কা কাটিয়ে ভোক্তা চাহিদা বাড়লেও চিপের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় ডিভাইস উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশ্বে চিপ সংকট দেখা দেয়ার একাধিক কারণ রয়েছে বলা হচ্ছে। প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট নির্বাহী এবং বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং কালো তালিকাভুক্তি চিপ সংকট দেখা দেয়ার অন্যতম কারণ। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং কতদিন স্থায়ী হবে তা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে বিপুলসংখ্যক চিপ মজুদ করেছে হুয়াওয়ে। এছাড়া চিপ সংকট দেখা দেয়ার পেছনে জাপানের একটি বৃহৎ চিপ উৎপাদন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনের প্রভাব এবং ফ্রান্সে টানা ধর্মঘট পরিস্থিতির অবনতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
চীনের শেনজেনভিত্তিক সোর্সিং কোম্পানি স্যান্ড অ্যান্ড ওয়েভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডনি ঝাং বলেছেন, সমগ্র ইলেকট্রনিকস শিল্পই প্রয়োজনীয় কম্পোনেন্ট সংকটে ভুগছে। তিনি বলেন, স্মার্ট হেডফোন উৎপাদনে ব্যবহূত মাইক্রো-কন্ট্রোলার পেতে বেশ দেরি হচ্ছে। যে কারণে তিনি যে পণ্যটি নিয়ে কাজ করেন তা উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। যে পণ্য আমরা এক মাসের মধ্যে উৎপাদন শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম, তা এখন শেষ করতে দ্বিগুণ সময় লেগে যাবে।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নতুন বিধিনিষেধের আওতায় মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিপ উৎপাদন করে এমন অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লাইসেন্স নিতে হবে। যে কারণে হুয়াওয়ের কাছ থেকে চিপের নতুন ক্রয়াদেশ নেয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয় টিএসএমসি। তবে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে হুয়াওয়ের ক্রয়াদেশকৃত চিপ সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্লেষকরা চলতি বছর চিপ সংকট বিষয়ে আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল। তবে এ পরিস্থিতির মধ্যে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা টিএসএমসির বিক্রি বেড়েছে ২২ শতাংশ, যা প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে টিএসএমসির রাজস্ব ৩৫ হাজার ৬৪০ কোটি তাইওয়ানিজ ডলারে (১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার) পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই প্রান্তিকের ২৯ হাজার ৩০০ কোটি তাইওয়ানিজ ডলারের চেয়ে বেশি। এছাড়া জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইউনাইটেড মাইক্রোইলেকট্রনিকস করপোরেশন ও মিডিয়াটেক ইনকরপোরেশনের রাজস্ব বেড়েছে। তবে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল টিএসএমসি।