আজ ২১ ডিসেম্বর সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) ৭ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক মো. সাঈদ হোসেন খন্দকারের স্বাক্ষরে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বরাবর এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আইপিও আবেদনের যোগ্যতাস্বরূপ পুঁজিবাজারে কমপক্ষে ২০ (বিশ) হাজার টাকার বিনিয়োগের বিধান এবং বিনিয়োগকারীদের আইপিও কোটা ১০০% এ উন্নীত করায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
২০১০-১১ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে মহাধ্বসের পর বিনিয়োগকারীরা এতোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যে, অনেকে পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অনেকে মানসিক যন্ত্রণায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর সুখের সংসার তচনছ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি ফেরত পেতে নতুন বিনিয়োগ করলেও বারংবার অদৃশ্য চক্রের কাছে পরাজিত হয়েছে- যা বর্তমানেও চলমান। চলতি বছর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুন:গঠনের পর আপনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা ফিরে পায়। সেই আস্থায় পুনরায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে। কারণ প্রাইমারি মার্কেট চাঙ্গা করতে ফিক্সড প্রাইস এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কমিশন যেসব কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিচ্ছে সেগুলো পুঁজিবাজারে বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। একদিকে প্লেসমেন্ট কারসাজি, অন্যদিকে ইলিজিবল ইনভেস্টরদের সাজানো নাটকে বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব সেকেন্ডারি মার্কেটে পড়ছে। এ ছাড়াও, বিএসইসির পাবলিক ইস্যু রুলস ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ না দেখে একটি বিশেষ শ্রেণীকে সুযোগ-সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছে। যে কারণে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ইলিজিবল ইনভেস্টরদের বিডিং কারসাজির কারণে অতি উচ্চ মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে শেয়ার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে ০৭ (সাত) দফা দাবিসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো:
০৭ (সাত) দফা দাবি:
০১. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বিডিংয়ে কাট অফ প্রাইস থেকে বিনিয়োগকারীদের ৮০% বাট্টায় সুযোগ দিতে হবে। কারণ বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। উল্লেখ্য, যোগ্য বিনিয়োগকারীরা এখন আর যোগ্য নেই। তারা বিভিন্ন কারসাজি ও অনিয়মে সম্পৃক্ত। তাই তাদের সাজানো ও পূর্ব পরিকল্পিত বিডিংয়ের অতি উচ্চ মূল্যে কাট অফ প্রাইসের ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা পা দিতে পারেন না। এজন্য বিনিয়োগকারীরা তাদের সামর্থ মোতাবেক কাট অফ প্রাইস নির্ধারণের জন্য ৮০% বাট্টা চায়। কাজেই বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি থেকে উত্তোরণে তথা বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর সার্থে এবং পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে বিডিংয়ের কাট অফ প্রাইস থেকে ৮০% বাট্টার সুব্যবস্থা করতে হবে। সুতরাং বিডিংয়ের স্বচ্ছতা আনয়নে সাজানো, পূর্ব পরিকল্পিত ও কারসাজি বন্ধ করন এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা ও সুরক্ষার লক্ষ্যে পাবলিক ইস্যু রুলস দ্রুত সংশোধন করতে হবে।
০২. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো খাতের ভালো ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনয়নের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেমন- পদ্মা সেতু প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশ প্রজেক্ট, লা মেরিডিয়ান হোটেল (বেস্ট হোল্ডিংস লি.), আশুগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রকল্প ইত্যাদি। এ ধরণের সম্পদভিত্তিক ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতার জন্যই দ্রুত বাজারে আনয়ন করতে হবে। কারণ, উল্লেখিত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করলে পুঁজির নিরাপত্তা থাকে এবং স্ট্যান্ডার্ড ডিভিডেন্ডের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
অবকাঠামোগত খাতের কোম্পানিগুলোতে ডিভিডেন্ডের টাকা ৫ বছর গ্যারান্টিস্বরূপ Investors dividend protection fund হিসেবে সংরক্ষিত রাখার বিধান আছে- যাহা অর্থমন্ত্রনালয় কর্তৃক নির্দেশিত। এখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অত্যন্ত স্বচ্ছ্ব বিনিয়োগ থাকে। শুধু তাই নয়, অবকাঠামোগত খাতের কোম্পানিগুলোর পর্যাপ্ত অ্যাসেট থাকে। এই ধরণের খাতে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত নিরাপদ ও সুরক্ষামূলক। কাজেই, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের এই সকল প্রকল্পে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশ গড়ার শরীক হতে দিতে হবে।
০৩. পুঁজিবাজারে প্রায় ৪০ (চল্লিশ) হাজার কোটি টাকার মার্জিন ঋণধারী বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে উত্তোরণে ক্ষতিগ্রস্ত মার্জিন ঋণধারী বিনিয়োগকারীদের লেনদেনে বিধি-বিধান বিশেষভাবে শিথিল করতে হবে।
০৪. পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতায় শেয়ার বাই-ব্যাক আইন দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
০৫. আর্থিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নো ডিভিডেন্ড দেয়া কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
০৬. ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের বিশাল অংকের টাকা আটকে আছে। কাজেই যে সকল কোম্পানি নিয়মিতভাবে উৎপাদনে আছে ও বিএসইসির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে- সেগুলোকে অতি দ্রুত মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডাররা তাদের ক্ষতি থেকে উত্তরণ পাবেন এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।
০৭. পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকরীদের কল্যাণার্থে Investor’s Welfare Protection Fund দ্রুত গঠন করতে হবে।