পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বড় মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে প্রতারণা করছে বিভিন্ন চক্র। এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জকেন্দ্রিক এ ধরনের একটি চক্র শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সেই সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা রোধে থানায় মামলা দায়ের করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আসাদুর রহমান এসব তথ্য জানান।
হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, তার একটি বর্ণনাও দেন আসাদুর রহমান।
তিনি বলেন, ডিএসইর অনুমোদিত প্রতিনিধি উল্লেখ করে প্রথম চক্রটি মেসেজ দেয়। এরপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে অল্প টাকা নেয়। দেখা গেলো শুরুতে চার হাজার টাকা নিয়ে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেয়। এরপর ধীরে ধীরে টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সেই মোবাইল নম্বরও বন্ধ করে দেয়।
একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে চার হাজার টাকা দিলে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেয়। এরপর ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বলে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে মুনাফা যাচ্ছে না। সমস্যা সমাধানের জন্য আরও ৪০ হাজার টাকা দিতে বলে। এরপর আরও ৪০ হাজার টাকা পাঠালে, তারপর সেই মোবাইল বন্ধ করে দেয়। এভাবেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা করা হচ্ছে।
আসাদুর রহমান আরও বলেন, প্রতারকরা টি-১ ডেটে জেড গ্রুপের শেয়ার বিক্রির কথাও বলছে। বাস্তবে তো টি-১ ডেটে শেয়ার বিক্রির সুযোগ নেই। প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছে। প্রতারক চক্র বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর লোগো ও ঠিকানা ব্যবহার করছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত এমডি বলেন, চক্রটি দ্রুত মুনাফা করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টানা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে করে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। এ প্রতারণা রোধে খিলক্ষেত থানায় গত ৩ আগস্ট অভিযোগ করা হয়। এছাড়া সচেতন করার জন্য ট্রেকহোল্ডারদের এবং ডিএসই ভবনের সব অফিসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বিএসইসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এই প্রতারক চক্রের একটি দলকে শনাক্ত করেছে বলে ডিএসইকে জানিয়েছে। চক্রটি নারায়ণগঞ্জকেন্দ্রিক। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য গত ২৬ আগস্ট খিলক্ষেত থানায় আবার সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
আসাদুর রহমান বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে। এর মধ্যে প্রতারক চক্রের কারণে পুঁজিবাজারের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মোবাইল অ্যাপ ছাড়া পুঁজিবাজারের লেনদেন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই কারও প্রলোভনে পড়ে অন্য কোনোভাবে লেনদেন না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রকে ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তৎপর রয়েছে। তাই এই চক্রকে বলবো, যারা সাধারণ মানুষের থেকে টাকা নিয়েছেন, তারা ফেরত দিয়ে দেবেন। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের লেনদেন করার আগে ডিএসই, সিএসই ও বিএসইসির ওয়েবসাইটে দেওয়া নাম্বারে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলন ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) শফিকুল ইসলাম ভূইয়া ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।
 
                         
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                 
                     
                 
                