এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুরের মেঘনার চরে নান্দনিক ও শৈল্পিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের জন্যে জায়গা লাগবে ৬শ’ একর। ব্যয় করা হবে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর এর জন্যে উপযোগী জায়গা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন মৌজার দাসাদী সংলগ্ন মেঘনা নদীর তিনটি চরকে। শহর থেকে এটির অবস্থান হচ্ছে- বড় স্টেশন মোলহেড থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে। এখানে তিনটি বিচ্ছিন্ন বিশাল চরকে বেছে নেয়া হয়েছে চাঁদপুরে স্বপ্নের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্যে।
এ লক্ষ্যে রোববার ( ২৭ ডিসেম্বর ) মেঘনার ওই চরে প্রকল্প পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে দাসাদী সংলগ্ন মেঘনার তীরে আনুমানিক ২৮০ একর জায়গা নিয়ে জেগে ওঠা ওই চরে প্রকল্প পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রকল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ছাড়াও জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং আরো অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন বøু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট এন্ড ট্যুরিজম ক্লাব লিমিটেড-এর পরিচালক রাজিব আহমেদ। তিনি এই পর্যটন কেন্দ্রে যা কিছু থাকবে তা মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
এই পর্যটন কেন্দ্রে যা কিছু থাকবে তা হচ্ছে : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের স্মৃতি সম্বলিত ভাস্কর্য, জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জাদুঘর, পানির ওপর ভাসমান কটেজ, ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কার, ট্রেডিশনাল কটেজ, স্টুডিও এপার্টমেন্ট, পাঁচ তারকা হোটেল, থিম পার্ক, রিভার ক্রুজ, স্পিড বোট, হেলিকপ্টার, কনভেনশন হল, থিয়েটার, মিউজিয়াম, ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো সেন্টার, মার্কেট, ফুড কোট, জিমনেসিয়াম, ইনডোর এবং আউটডোর গেমস, ক্রিকেট অ্যারোনা, সুইমিং ক্লাব, ওয়াটার রাইড, হসপিটাল, পার্টি সেন্টার, হলি কর্নার, রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্টাফ রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া, এগ্রি ট্যুরিজম, গ্রীন এনার্জি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ প্রধান প্রধান শহরের সাথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা এবং পর্যটন ডিপ্লোমা কোর্স স্কুল; যেখান থেকে প্রতি বছর ২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী বের হবে, যা পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট এন্ড ট্যুরিজম ক্লাব লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাগর মাহমুদ জানান, এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের ভ্রমণের ব্যবস্থা এবং ২০ হাজার পর্যটকের রাত্রিযাপনের সুবিধা থাকছে। তিনি জানান, এই পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে প্রায় ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাবে। এছাড়াও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে পর্যটন শিল্প একটি মাইলফলক ভ‚মিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও জানান, চাঁদপুরের দু’টি স্থানে ইকোনমিক জোন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ১২ হাজার একর ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে গড়ে উঠবে বিভিন্ন প্রকার শিল্প প্রতিষ্ঠান। চাঁদপুরে এই পর্যটন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হলে ইকোনমিক জোনের ব্যবসায়ীগণ বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। তিনি জানান, আমাদের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্যে তিনটি ধাপে বিভক্ত করা হয়েছে। মোট তিনটি ধাপে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের করার জন্যে ৬০০ একর ভূমির প্রয়োজন। প্রথম ধাপে প্রয়োজন ২৬৫ একর, দ্বিতীয় ধাপে ২১০ একর এবং তৃতীয় ও শেষ ধাপে প্রয়োজন ১২৫ একর।
অনুষ্ঠিত প্রকল্প পরিচিতি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট এন্ড ট্যুরিজম ক্লাব লিমিটেড এবং জাপান ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, গোলাম কিবরিয়া জীবন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের ভুগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ওয়াহিদুজ্জামান, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী, ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট এন্ড ট্যুরিজম ক্লাব লিমিটেড-এর পরিচালক মো. মুনসুর আলম মুন্না, মো. মাইনুল হাসান দোলন প্রমুখ।
রোববার বেলা ১২টায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড থেকে স্পীডবোটযোগে মেঘনার বিশাল জলরাশি পাড়ি দিয়ে ওই চরে গিয়ে পৌঁছান প্রকল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও অতিথিগণ। সেখানে পুরো পিকনিকের আমেজে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।