আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ষাটের দশকে লেখালেখি শুরু করে আমৃত্যু লিখে গেছেন। বাংলা গদ্য সাহিত্যকে তিনি শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। বাস্তবতার নিপুণ চিত্রায়ণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ণ কৌতুকবোধ তার রচনাকে দিয়েছে এক ব্যতিক্রমী সুষমা।
‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসে রূপায়িত হয়েছে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন। ‘খোয়াবনামা’য় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জনপদে পাকিস্তান আন্দোলনের চিত্র। মাত্র দুটি উপন্যাসই লিখেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
বলা যায়, দু'টিই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। তার রচনাগ্রন্থ বেশি নয়। দুটি উপন্যাস ছাড়াও পাঁচটি ছোট গল্পগ্রন্থ আর একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রয়েছে তার। কিন্তু এ অল্প রচনা সম্ভারই অবলীলায় ঘোষণা করে তার সাহিত্যকীর্তি।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কালজয়ী কথাশিল্পী। ওপার বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর মূল্যায়ন, 'কি পশ্চিম বাংলা কি বাংলাদেশ সবটা মেলালে তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক।'
ষাটের দশকের এই শক্তিধর কথাশিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি ক্যানসার হানা দিয়ে শক্তিধর এই কথাকারকে পৃথিবী থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ১৯৯৬-এর জানুয়ারিতে তার পায়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। মার্চে কলকাতায় এক অপারেশনের মাধ্যমে ডান-পা কেটে ফেলার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে শক্তিমান এই লেখকের মহাপ্রয়াণ ঘটে। তিনি মনে করতেন- ‘একজন মানুষ অন্ততপক্ষে তিনশ বছর বেঁচে থাকা উচিত।’ অথচ অর্ধশত বছর পূর্ণ হতেই মাত্র ৫৪ বছর বয়সে চলে যেতে হয়েছে তাকে!
কিংবদন্তী এই কথাশিল্পীর জন্ম গাইবান্ধা জেলার সাঘাটায় । ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোট্টিয়া গ্রামে মামা বাডিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায়। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৫৮) এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন (১৯৬০)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন (১৯৬৪)। এরপর কর্মজীবন শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজের বাংলার প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গল্পগ্রন্থ- অন্যঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল। বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবান্বিত মুহূর্ত ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পের বৃহত্তর একটা অংশ। ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’ নামে একটি মূল্যবান প্রবন্ধের বইও রয়েছে তার।
১৯৭৭ সালে তিনি হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন ৷ ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন৷ ১৯৮৭ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে খোয়াবনামার জন্য পান প্রফুল্ল কুমার সরকার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার এবং সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার ।