খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়ভাবে ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে।’
‘শিল্প ভালো করছে এবং সরকারের কাছ থেকে সব সহযোগিতা পাচ্ছে, এই যে একটি ধারণা অনেকেই পোষণ করছেন, তার আজ প্রকৃত পূর্নমূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘পোশাক শিল্পের আজকের বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত পরশুদিন এ মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পত্র জারি করেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই নির্দেশনা এমন সময়ে দেয়া হলো, যখন কিনা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয়মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্ততপক্ষে আরও অতিরিক্ত একবছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দূরুহ হবে।’
‘রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সদ্য ২০২০ এর ডিসেম্বর মাসের যে রফতানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানেও আমাদের রফতানির উদ্বেগজনক চিত্র বহাল আছে। ডিসেম্বর মাসে পোশাক রফতানিতে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত থেকে পতন হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যার কারণে ২০২০ সালের বার্ষিক রফতানিতে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ দৃষ্টান্তহীন পতন ঘটেছে।
‘২০২০ এর জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রফতানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮,০৭ শতাংশ। উল্লেখিত মাসে নিটওয়্যার রফতানি ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট নিটওয়্যারের জন্য চাহিদা।’
‘গত ২ বছরের রফতানির প্রবণতার দিকে তাকালে আমরা দেখি যে, অক্টোবর’ ২০১৮ থেকে অক্টোবর’ ২০২০ এর সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং নভেম্বর’২০১৮ থেকে নভেম্বর’২০২০ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের রফতানি (২ বছরের) প্রবৃদ্ধির পরিবর্তন হয়েছে ঋণাত্মক ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর অর্থ হলো, আমরা ২০২০ সালে যা রফতানি করেছি, তা ২০১৮ সালে যা রফতানি করেছিলাম তার তুলনায় ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশের কম।’
‘সমগ্র বিশ্ব দেখেছে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কী এবং খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর সেগুলো কী প্রভাব রেখেছে। বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দা ক্রিসমাস সেল। এসবের প্রভাবে ২০২০ এর সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমা বিপর্যস্ত। যেহেতু ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই আমাদের আশঙ্কা, রফতানির এই নিম্নমূখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পোশাক শিল্পের এ পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করি, যাতে করে আমরা নীতি নির্ধারকদেরকে শিল্পের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হই।’