শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ‘ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস- আইডিইএ’ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উৎস হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারে কোনো লোক যদি দুষ্টামি করতে আসে, তার কাছে কত টাকা থাকতে পারে? শত কোটি, হাজার কোটি? আমরা তার ১০ গুণ ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছি আইসিবিকে। যাতে কেউ খেলতে এসে কোনো সুবিধা না করতে পারে। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে ধরে ফেলব তখনই।
তিনি বলেন, আইসিবিকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বা ব্যাংকিং খাতের যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে এর সঠিক ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া আমরা হিসাব করে দেখেছি, মানুষকে দেয়া হয়নি এরকম লভ্যাংশ এবং শেয়ার পড়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। সেসব এতদিন বিভিন্ন জায়গায় পড়েছিল। আমরা সবগুলোকে এখন মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে আইসিবির কাছে নিয়ে আসছি। এই স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, এই ফান্ডটি পার্পেচুয়াল হবে। যে কেউ যখন তার সঠিক কাগজপত্র নিয়ে আসতে পারবেন, তিনি তার টাকা নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু যতদিন এই ফান্ড আইসিবির কাছে থাকবে, এটা আমাদের মার্কেটকে স্ট্যাবল করার জন্য কাজ করবে। আইসিবি যেন এই তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য ফাইন্যান্সিয়াল টুলসও তৈরি করা হয়েছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা কারসাজি থামানোর কাজ করে যাচ্ছি। প্রথম প্রথম আমরা বিষয়গুলো গণমাধ্যমে জানাতাম। তাতে দেখলাম একটু আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আমরা এখন যারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে বা চাতুরি করতে চায়, তাদের ফোন করে কমিশনে ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করছি।
‘এছাড়া মার্জিন ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কম সুদে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। সার্ভেইলেন্সে আমরা সুইডেনের এখন সবচেয়ে লেটেস্ট যে সার্ভেইলেন্সের সফটওয়্যার, সেটা ব্যবহার করছি। যে কেউ কোনো কিছু করলেই আমরা সহজেই সেটা ধরে ফেলতে পারি।’
আলোচনায় ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে যে ধস হয়েছে, সে সময় আজকের মতো শেয়ারবাজার নিয়ে সবার জ্ঞান ছিল না। ১৯৯৬ সালে মানুষ হাতে কাগজ নিয়ে মতিঝিলে শেয়ার লেনদেন করত। কিন্তু এখন এরকম নেই। এখন এগুলো সব চলে এসেছে সিডিবিএল এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি প্লাটফর্মের মধ্যে। আমাদের সার্ভেইলেন্সের সফটওয়্যার এখন অনেক শক্তিশালী।
সাবেক একদল সচিবের গড়া প্লাটফর্ম আইডিইএ’র প্রথম এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলামের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান।
আলোচনায় অংশ নেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর, ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজার আরও অনেক দূরে যেতে হবে। শেয়ারবাজার ভালো করতে হলে নতুন ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। আর শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। সরকার শেয়ারবাজার নিয়ে খুব ইতিবাচক। বিএসইসি ভালো কাজ করছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে শেয়ারবাজারে টেনে আনতে হবে। শেয়ারবাজারের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আরিফ খান বলেন, শেয়ারবাজারে কারসাজিকারীদের ধরার জন্য তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। তাদের বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একটি মার্জারে এবং অ্যাকুইজেশন পলিসি করতে হবে। সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বাঁচানোর নীতি নিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বড় এবং ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। একটি গতিশীল বন্ড মার্কেট করতে হবে।