এদিকে রিং শাইন টেক্সটাইলের ব্যাংক হিসাব প্রায় একমাস ধরে স্থগিত (Freeze) করে রাখা হয়েছে। কোম্পানিটির বিদেশি পরিচালকেরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে বিএসইসির অনুরোধে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
উল্লেখ, গত ৯ জানুয়ারি এমডিসহ ৩ পরিচালক বিভিন্ন কারণে তাদের নিজ দেশ তাইওয়ানে যান।বিষয়টি নিয়ে তখন হঠাৎ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন কোম্পানির পরিচালকরা। এরপর ওই মাসে শেষ সপ্তাহে বিএসইসি এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে আলোচিত কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়।
এদিকে গত ২৯ জানুয়ারি রিং শাইনের এমডি বাংলাদেশে ফিরেন এবং কাজেও যোগ দেন। কিন্তু এমডি কাজে যোগদান করার পরও গত একমাসে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়নি।
সুত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব সেচল হতে আরও সময় লাগবে। বর্তমানে কোম্পানির বিষয়টি বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগে যাচাই-বাচাইয়ের জন্য রয়েছে। এনফোর্সমেন্ট বিভাগের তদন্ত শেষে ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে কোম্পানিকে শুনানির জন্য ডাকা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি রিং শাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন এবং পরিচালক ও এমডির বোন সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা এবং পরিচালক ও এমডির মামী হাসিয়ো লিউ ই চাই নিজ দেশ গিয়েছেন। এমডির শাশুরী মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে তারা নিজ দেশে গিয়েছেন। আর এটাকেই একটি মহল রিং শাইনর পরিচালকেরা আইপিওে এর টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন একটি মহল এই গুজব ছড়াতে পারে বলে মনে করেন রিং শাইন কর্তৃপক্ষ।
রিং শাইনের আইপিও ফান্ড আত্মসাৎ নিয়ে বাজারে নানা ধরনের গুজব রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- কোম্পানিটির বিদেশী পরিচালকেরা আইপিওতে উত্তোলিত ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন। তারা আর দেশে ফিরবেন না। এমন খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রিং শাইন নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়।
রিং শাইনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির আইপিও ফান্ডের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ৪টি হিসাব রয়েছে। এরমধ্যে আইপিওতে বাংলাদেশীদের আবেদনের জন্য ১টি, বিদেশীদের মধ্যে ডলারের জন্য ১টি, ইউরোর জন্য ১টি এবং পাউন্ডের জন্য ১টি হিসাব।
ব্যাংক হিসাব অনুযায়ি, রিং শাইনের আইপিও ফান্ডের ৪ হিসাবে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ও আইপিওবাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ব্যাংকে আইপিও ফান্ড রাখায় সুদজনিত ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার আয় হয়েছে।
আইপিও হিসাবের ৪টির মধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৩ নম্বর ব্যাংক হিসাবে ৮২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৪ নম্বর হিসাবে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৫ নম্বর হিসাবে ৬ হাজার ৮৪২ পাউন্ড বা ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৬ নম্বর হিসাবে ২ হাজার ৭০৭ ইউরো বা ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রয়েছে। অর্থাৎ রিং শাইনের আইপিও ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে।
রিং শাইন টেক্সটাইল বাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এরমধ্যে প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যা দিয়ে ঢাকা ব্যাংকের ২৮ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। আইপিওতে ডিএসইর ফি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয় করা হবে। যা ক্রয়ে সময়সীমা রয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।