ঘুরে আসুন সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমিয়াখুম জলপ্রপাত থেকে

ঘুরে আসুন সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমিয়াখুম জলপ্রপাত থেকে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পিপাসায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমরা বিদেশ ঘুরে আসি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না বাংলাদেশের অনেক স্থানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রয়েছে। এমনই একটি স্থান বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত আমিয়াখুম জলপ্রপাত। এটি বাংলাদেশের দুর্গম জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবুজে মোড়া পাহাড় আর পাথরের বাধা পেরিয়ে দুধসাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে তুমুল বেগে নিচে নেমে আসছে শীতল পানির ধারা। লোকালয় থেকে অনেক দূরে বিশুদ্ধ প্রকৃর মাঝে জলের পতন আর প্রবাহের শব্দতরঙ্গের সুরের মূর্ছনা পর্যটকদের মোহাবিষ্ট করে তোলে। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা আমিয়াখুম জলপ্রপাত অনেকের কাছে পেয়েছে বাংলার ভূস্বর্গ নামের সুখ্যাতি।

বান্দরবানের প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য আমিয়াখুমের সৌন্দর্য দেখতে প্রায় সারাবছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এসে ভিড় করেন। বর্ষায় আমিয়াখুমের সৌন্দর্য পূর্ণতা ফিরে পায়। বহু কষ্ট স্বীকার করে পাহাড়ের দূর্গমতার মাঝে আমিয়াখুমের মুখোমুখি হওয়া যেন এক যথার্থ উৎসর্গ! তবে ভরা বর্ষায় সাঙ্গু নদীর পানি বেশি থাকে এবং ফ্লাশ ফ্লাডের আশঙ্কা থাকে বলে নিরাপত্তা বিবেচনা করে যাওয়া উচিত। এছাড়া বছরের যে কোন সময়েই যাওয়া যায় এই ঝর্ণায়। ট্রেকিং করতে হয় বলে শীতকালে যাওয়া কিছুটা সুবিধাজনক।

আমিয়াখুম যেতে চাইলে দেশের যেকোন স্থান হতে প্রথমে বান্দরবান জেলায় চলে আসুন। এরপর থানচি উপজেলা হয়ে আমিয়াখুম যেতে হয়। থানচি থেকে দুইপথে আমিয়াখুম যাওয়া যায়। আমিয়াখুম দুইভাবে যাওয়া যায়। রুট ১: থানচি > পদ্মঝিরি > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম। রুট ২: থানচি > রেমাক্রি > নাফাখুম > জিনাপাড়া > থুইসাপাড়া > দেবতাপাহাড় > আমিয়াখুম। প্রথম রুট দিয়ে অনেকে গেলেও দ্বিতীয় রুট তুলনামূলক সুবিধাজনক। এছাড়া পদ্মঝিরি দিয়ে গিয়ে রেমাক্রি হয়ে আসা যায়।

বান্দরবান শহর থেকে বাস বা জীপে চড়ে থানচি উপজেলা যেতে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা সময় লাগে। থানচি উপজেলায় পৌঁছে অবশ্যই আপনাকে একজন গাইড ঠিক করে নিতে হবে। গাইড ছাড়া আমিয়াখুম যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায় না। গাইড নিয়ে সেখানের প্রশাসন থেকে অনুমতি নিতে হবে। এরপর থানচি থেকে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে চলে আসুন রোমাক্রি বাজারে। যদি দুপুরের মধ্যে রোমাক্রির পৌঁছাতে পারেন তবে আর সময় নষ্ট না করে নাফাখুম ঝর্ণার উদ্দেশ্য হাটা শুরু করতে পারেন। রোমাক্রি হতে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ট্রেকিং করলে নাফাখুম ঝর্ণা দেখতে পাবেন। সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে থুইসা পাড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। থুইসা পাড়া পৌছাতে বেশী রাত হবে মনে হলে তার আগের পাড়া জিনাপাড়ায় রাতে কাটিয়ে নিতে পারবেন।

নাফাখুম ঝর্ণা থেকে ৩-৪ টা ঘন্টা ট্রাকিং দূরত্বে থুইসা পাড়ার অবস্থান। সেখানে রাত কাটিয়ে থানচি গাইড সহ আরও একজন লোকাল গাইড নিয়ে খুব সকালে বেড়িয়ে পড়ুন আমিয়াখুম যাত্রায়। প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা বান্দরবানের প্রকৃতির আদিম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দেবতা পাহাড় হয়ে আমিয়াখুম ঝর্ণায় পৌঁছে যাবেন। আমিয়াখুম ঝর্ণার কাছেই রয়েছে ভেলাখুম ও সাতভাইখুম। তাই পরিকল্পণা সেই মাফিক সাজিয়ে রাখুন। দুপুরের খাবারের জন্যে আগেই ব্যবস্থা করে রাখুন। ফিরতি পথে আমিয়াখুম থেকে থুইসা পাড়ায় রাত কাটিয়ে আগের মত করে অথবা ভিন্ন রুট ধরে থানচি ফিরে আসুন। থানচি থেকে বান্দরবান এসে আপনার গন্তব্যে চলে আসুন।
থানচির পর যেখানেই থাকতে চান আপনাকে স্থানীয় আদিবাসিদের ঘরে থাকতে হবে। আপনার এই পুরো পথ ধরে বেশ কিছু আদিবাসী পাড়া রয়েছে। সাধারণত থাকতে হলে রেমাক্রি, নাফাখুম পাড়া, জিনাপাড়া ও থুইসা পাড়ায় রাত্রীযাপন করা হয়। থাকার ব্যাপারে আপনার গাইডই সব ব্যবস্থা করে দিবে। আপনার ট্রেকিং এর পথে খাওবার জন্যে স্থানীয় আদিবাসীদের ঘরেই খেতে হবে। পর্যটকদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন প্যাকেজে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কোথায় কি খাবেন তার জন্যে গাইডের সাথে আগেই পরামর্শ করে নিন। জুম চালের ভাত, সবজি, ডাল, পাহাড়ী মুরগী, আলু ভর্তা এইরকম খাবারের প্যাকেজ অনুযায়ী খেতে পারবেন। আর সাথে করে অবশ্যই পরিমান ও পরিকল্পনা মাফিক শুকনো খাবার যেমন বিস্কিট, চকোলেট, চিড়া, মুড়ি, খেজুর এমন সব খাবার নিয়ে যাবেন। পুরো যাত্রাপথে কঠিন পরিশ্রমের ট্রেকিং করতে হবে।

আমিয়াখুম ভ্রমণে গেলে অবশ্যই একসাথে কয়েকজন মিলে ঘুরতে যাওয়া উচিত। এতে খরচ যেমন কম হবে তেমনি এই দুর্গম যায়গা ভ্রমণে সাহস পাওয়া যাবে। আমিয়াখুম ভ্রমণে মূল খরচ গুলো হলো- বান্দরবান আসা – আপনি যেখানেই থাকেন সেখান থেকে বান্দরবান শহরে আসতে যে খরচ। বান্দরবান থেকে থানচি – বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়া আসার জন্যে জীপ, চান্দের গাড়ী অথবা বাসে যেতে হবে। রিসার্ভ জীপ/চান্দের গাড়ী ৫৫০০-৬০০০ টাকা এবং বাসে জনপ্রতি ২০০ টাকা। থানচি থেকে রেমাক্রি – থানচি থেকে রেমাক্রি ইঞ্জিন নৌকায় যাওয়া ও আসা ৪০০০-৪৫০০ টাকা। এক নৌকায় ৫-৬ জন বসা যায়। গাইড খরচ – আমিয়াখুম, ভেলাখুম, সাতভাইখুম সব ভ্রমণের জন্যে গাইড খরচ ৪৫০০-৫০০০ টাকা। খাবার খরচ – আদীবাসীদের ঘরে খাবার খেতে প্রতি বেলা ১২০-১৫০ টাকা লাগবে। থাকার খরচ – আদিবাসীদের ঘরে থাকতে জনপ্রতি এক রাত ১৫০ টাকা।

আমিয়াখুম যেতে হলে দীর্ঘ পথ ও দীর্ঘ সময় ট্রেকিং করতে হয়। যাত্রাপথে বিশাল সব পাহাড় খাড়া উঠা ও নামা লাগে। তাই আগে যদি ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে ভাল করে জেনে বুঝে তারপর যাওয়া উচিত। একসাথে গ্রুপ করে যাওয়া সুবিধাজনক, এতে খরচ যেমন কম হবে তেমনি মনোবল ভাল থাকবে। পুর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন কেউ থাকলে সবচেয়ে ভাল হবে। এছাড়া অনেক ট্রাভেল গ্রুপ আমিয়াখুম ট্যুর দিয়ে থাকে, তাঁদের সাথেও যেতে পারেন। ট্রেকিং এর জন্যে সুবিধাজনক জুতা, ভালো ব্যাগ এবং জামাকাপড় ব্যবহার করতে হবে। আর অবশ্যই ব্যাগ এত ভারি করা যাবে না। কারণ ব্যাগ আপনাকেই বহন করতে হবে। যত কম কিছু নেওয়া যায় ততই ভালো হবে আপনার জন্যে। সাথে করে নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধ, ফার্স্ট এইড বক্স, কিছু শুকনো খাবার নিয়ে নিবেন। এছাড়া স্যালাইন, গ্লুকোজ অনেক কাজে দিবে। থানচি বাজারের পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। গাইড ঠিক করার আগে কি কি প্ল্যান, কি কি দেখবেন তার বিস্তারিত ঠিক করে নিন।

গাইডের পরামর্শ মেনে চলুন। নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে গাইডের কথা অনুসরন করুন। মনে রাখবেন, সেখানে গাইডই আপনার একমাত্র পথ নির্দেশক। এছাড়া থাকা ও খাওয়ার ব্যাপারে গাইডের সাথে আগেই কথা বলে রাখুন। আদিবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। সাবধানে আমিয়াখুম ভ্রমণ করুন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ভিসা ছাড়াই তুরস্কে যেতে পারবেন যারা
পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন ছাড়ার নির্দেশ
এভিয়েশন শিল্পের দ্বিগুণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে
খৈয়াছড়া ঝরনা: কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, খরচ কেমন
টিকিটে ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে বিমান
পর্যটনকেন্দ্রের পরিবেশ রক্ষা করতে হবে
ঢাকা-আদ্দিস আবাবার ম‌ধ্যে সরাসরি বিমান চালুর প্রস্তাব
টিকিটে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে বিমান
ঢাকা-গুয়াংজু রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু ১৪ সেপ্টেম্বর
পর্যটন দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী মেলার আয়োজন