কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয় অবস্থিত মেঘনা ইকোনমিক জোনে তিনটি, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে তিনটি, আনন্দবাজারে দুটি ও মেঘনাঘাটে একটি মিলিয়ে মোট নয়টি শিল্প-কারখানার উদ্বোধনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হলো।
এ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে—মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড, সোনারগাঁ সিড ক্রাশিং মিলস লিমিটেড, মেঘনা বলপেন অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ এমএফজি লিমিটেড, মেঘনা নুডলস অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড, সোনারগাঁ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফ্রেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস অ্যান্ড ওয়্যার, মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি লিমিটেড, সোনারগাঁ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ডকইয়ার্ড লিমিটেড ও ফ্রেশ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (ইউনিট-২)। এ নয়টি শিল্প-কারখানায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে জার্মানি, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতের সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেঘনা সুগার রিফাইনারিতে দানাদার চিনির পাশাপাশি দেশে প্রথম তরল চিনি উৎপাদন করা হচ্ছে। দৈনিক সাড়ে তিন হাজার টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ শিল্পে এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানে এ পণ্য রফতানির আশাবাদ এই কোম্পানির।
এছাড়া জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, ইতালি, চীন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের আধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত বাংলাদেশের বৃহত্তম সোনারগাঁ সিড ক্রাশিং মিলে দেশে প্রথমবারের মতো লিকুইড লেসিথিনের পাশাপাশি পাউডার লেসিথিন উৎপাদিত হচ্ছে; যা বেকারি, ওষুধ শিল্প-কারখানা, ডেইরি ও ফিডের অপরিহার্য উপাদান সয়ামিল হিসেবে বিবেচিত। এ কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক সাড়ে পাঁচ হাজার টন, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬০০ মানুষের। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ, ভারত ও চীনে এ পণ্য রফতানি করা হবে বলেও জানান উদ্যোক্তারা।
উন্নতমানের বলপেন তৈরিতে মেঘনা বলপেন অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ এমএফজি কারখানা স্থাপন করেছে মেঘনা গ্রুপ। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভারতের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনে এ কারখানায় প্রতিদিন আট লাখ বলপেন উৎপাদিত হচ্ছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নেপাল ও ভিয়েতনামে এ বলপেন রফতানির সুযোগ রয়েছে। কারখানাটিতে ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জাপান, চীন ও ইউরোপের অত্যাধুনিক স্টেট অব দ্য আর্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে মেঘনা নুডলস অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এ কারখানায় বার্ষিক ৪০ হাজার টন বিস্কুট, ১ হাজার ৯০০ টন কেক, ২০ হাজার টন নুডলস, চার হাজার টন ওয়েফার, আট হাজার টন চকলেট, চার হাজার টন স্ন্যাকস, ১২ হাজার টন চানাচুর এবং ৬ হাজার ৫০০ টন ক্যান্ডি ও ললিপপ তৈরি হচ্ছে। এখানে চার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
চীন ও ভারতের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে নির্মিত সোনারগাঁ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং সলিউশন হিসেবে কাজ করবে। দৈনিক ৪ লাখ ৪২ হাজার পিস কার্টন ও প্যাকেজ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে ৪৫০ মানুষের।
দেশের প্রথম ওভেন সিস্টেম ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোড ও ফ্লাক্স কোরড আর্ক ওয়েল্ডিং ওয়্যার তৈরি হচ্ছে ফ্রেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস অ্যান্ড ওয়্যার কারখানায়। এর মধ্যে কারখানাটিতে ওভেন সিস্টেম ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোড উৎপাদনের সক্ষমতা মাসে এক হাজার টন ও ফ্লাক্স কোরড আর্ক ওয়েল্ডিং ওয়্যার উৎপাদনের সক্ষমতা মাসে ৪০০ টন। তুরস্ক, চীন ও ভারত থেকে আমদানীকৃত সর্বাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে এ কারখানায়, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০০ মানুষের।
এলপিজি সিলিন্ডার প্রস্তুত ও এলপিজি বোতলজাত করার একক বৃহত্তম শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি। কারখানাটিতে ১০ হাজার টন এলপিজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম রয়েছে, যা দেশে এলপিজির বৃহত্তম স্টোর হাউজ হিসেবে বিবেচিত। সর্বাধুনিক ইউরোপিয়ান মেশিনারি দ্বারা স্থাপিত এ কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৩০০ টন ও ১২ কেজি পরিমাণ সিলিন্ডার দৈনিক চার হাজার পিস। এখানে ৩৫০ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
নৌপথে পণ্য পরিবহন সুগম রাখার জন্য ইউরোপ ও চীনের সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা নির্মিত সোনারগাঁ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ডকইয়ার্ড লিমিটেডে পাঁচ হাজার ডিডব্লিউটি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন অয়েল ট্যাংকার, কার্গো শিপ, বাল্ক শিপ, গ্যাস শিপ, কনটেইনার শিপ প্রভৃতি তৈরি করা হচ্ছে। দেশীয় চাহিদার পাশাপাশি ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ জাহাজ রফতানির সুযোগ রয়েছে। এখানে দেড় হাজার দক্ষ জনবলের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জার্মানির সর্বাধুনিক যন্ত্র দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্মিত ফ্রেশ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের দ্বিতীয় ইউনিটে উন্নত মানসম্পন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিমেন্ট উৎপাদিত হচ্ছে। দৈনিক ১০ হাজার টন সিমেন্ট উৎপাদন সক্ষমতার এ কারখানায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও সিমেন্ট রফতানির সুযোগ রয়েছে।