সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলামোটরে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে বিএসসিএলের কার্যক্রম ও মনিটরিং সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচারিত টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচারের মান পর্যবেক্ষণের জন্য বিএসসিএলের প্রধান কার্যালয়ে সম্প্রতি মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মনিটরিং সেন্টারের পাশাপাশি স্যাটেলাইটের ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে মোবাইলফোনের বেইজ ট্রান্সসিভার স্টেশনে (বিটিএস) সংযোগ স্থাপন, এক টেলিফোন এক্সচেঞ্জ থেকে অন্য এক্সচেঞ্জে সংযোগ স্থাপন, ভিডিও সার্ভেলেন্স সিস্টেম পরিচালনা, বিজ্ঞাপন অপসারণপূর্বক বিদেশি টেলিভিশন (ক্লিন ফিড) সম্প্রচারসহ বিএসসিএলের বেশ কিছু উদ্ভাবনী সেবা প্রদর্শন করা হয়। এ সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা নিরূপণের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
এ সময় বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরীয়ার আহমেদ চৌধুরী, বিএসসিএলের পরিচালকরা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটি বা দুইটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা টিআরপি নির্ধারণ করে তাদের প্রক্রিয়ায় অনেক নমুনা সংগ্রহের কথা বলা হলেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি জানিয়েছে যে তারা মাত্র ১৬৪টি নমুনা সংগ্রহ করে সেখান থেকে টিআরপি দেয়, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন➥ ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ৬ আগস্ট
দেশের জনসংখ্যার নিরিখে কমপক্ষে ১০ হাজার নমুনা চলমানভাবে নিয়ে কাজ করলেই প্রকৃত চিত্রটা পাওয়া যাবে, অন্যথায় পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার নমুনা ‘কন্টিনিউয়াসলি কালেকশন’ করা হয় এবং সেভাবেই টিআরপি দেওয়া হয়। সেখানে সরকারের আওতাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েকটি সংযুক্ত সংস্থার মাধ্যমে টিআরপি নির্ধারণ করা হয়।
ড. হাছান বলেন, আমাদের দেশে এখন যে অবৈজ্ঞানিক ও ভৌতিক পদ্ধতিতে টিআরপি দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আমরা স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছি। সেজন্য ইতোমধ্যেই একটা কমিটি হয়েছে, কমিটি বেশ কয়েকটা বৈঠক করেছে। আমরা খুব সহসা সমাধানে পৌঁছাবো এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল সার্পোট দিতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে। কীভাবে ১০ হাজার স্যাম্পল কন্টিনিউয়াসলি কালেকশন করা যায় সেই কারিগরি সহায়তা দিতে তাদের প্রস্তুতি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। সুতরাং এ ব্যাপারে আমরা খুব সহসা একটা সমাধানে আমরা পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি।
এসময় বিদেশি চ্যানেলের ক্লিনফিড বাস্তবায়নের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের আইনানুযায়ী বিদেশি চ্যানেলগুলো কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে না। বিদেশি চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু বিদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন এখনো প্রদর্শিত হচ্ছে। আইন কিন্তু সেটাকেও অনুমোদন করে না। এটা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ চলছে। আজকে বিএসসিএল জানালো, তারা প্রয়োজনে ক্লিনফিড তৈরি করে দিতে পারবে যদিও এ দায়িত্ব যারা লাইসেন্স নিয়েছে তাদেরই। বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য যারা লাইসেন্স নিয়েছে সেই সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের আইন অনুসরণ করে ক্লিনফিড পাঠানো বা ক্লিনফিড সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা।
বিদেশি চ্যানেলগুলোতে আইনানুযায়ী ক্লিনফিড চললে আমাদের যে টেলিভিশন শিল্পই শুধু উপকৃত হবে তা নয়, পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে আমাদের পুরো গণমাধ্যমের সবাই উপকৃত হবে বলে যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশের সবক’টি স্যাটেলাইট চ্যানেল বিদেশি স্যাটেলাইটের স্লট ভাড়ার পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে এবং এটি আমাদের গর্বের বিষয় যে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। বাংলাদেশের পতাকা সম্বলিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে বাংলাদেশের বিজয় কেতন উড়ছে। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট টেলি-মেডিসিন, টেলি-এডুকেশন, ইন্টারনেট সেবাসহ আমাদের গণমাধ্যমের উন্নয়নের স্বার্থে আরও অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
টেলিভিশন সাংবাদিকদের বেতন ভাতা নিয়মিতকরণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমরা কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে টেলিভিশনগুলো আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। আমি অনুরোধ জানাবো সবাই যেন বেতন ভাতা সঠিকভাবে পরিশোধ করেন। আর আমরা আশা করছি, এটা খুব সহসা গণমাধ্যমকর্মী আইন পার্লামেন্টে নিয়ে যেতে পারবো। এটি যখন আইনের রূপান্তর হবে তখন সবার আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।