মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ‘পারিবারিক ব্যবসা জরিপ ২০২১’ প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেসব চ্যালেঞ্জ ঠিক করেছে তার মধ্যে পাঁচটি অগ্রাধিকারে হচ্ছে—ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানো, নতুন বাজারে ব্যবসা বিস্তৃত করা, নতুন পণ্য বা সেবা আনা, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং খরচ মিটিয়ে মূল ব্যবসাকে রক্ষা করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ কোম্পানি ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানোকে ১ নম্বর অগ্রাধিকারে রেখেছে, যেখানে বৈশ্বিকভাবে ৫২ শতাংশ কম্পানি এ অগ্রাধিকার ঠিক করেছে। ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য বৈচিত্রায়ণকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করে বাংলাদেশের কম্পানিগুলো। এর বিপরীতে কম্পানিকে টেকসই করা বা টিকে থাকা অগ্রাধিকার তালিকায় পাঁচ নম্বরে চলে এসেছে।
বাংলাদেশের ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে তাদের শক্তিশালী ডিজিটাল সক্ষমতা রয়েছে। যেখানে বৈশ্বিক গড়ে ৩৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মনে করে তাদের শক্তিশালী ডিজিটাল সক্ষমতা রয়েছে। দেশের ৩১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে তাদের ডিজিটাল সক্ষমতা শক্তিশালী, একই সঙ্গে এটি অগ্রাধিকারে। বৈশ্বিকভাবে এ হার ১৯ শতাংশ। ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সক্ষমতা শক্তিশালী কিন্তু অগ্রাধিকারে নেই। এ হারে বৈশ্বিকভাবে ১৯ শতাংশ। দেশের ১৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সক্ষমতা শক্তিশালী নয়, কিন্তু অগ্রাধিকারে রয়েছে। এর বিপরীতে বৈশ্বিকভাবে ৩৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সক্ষমতা শক্তিশালী নয়; কিন্তু অগ্রাধিকারে রয়েছে। দেশের ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সক্ষমতা শক্তিশালী নয় এবং অগ্রাধিকারেও নেই। এ হার বৈশ্বিকভাবে ২৯ শতাংশ।
এ ছাড়া কম্পানিগুলোর অগ্রাধিকারে থাকা আরো বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ব্যাবসায়িক মডেলে পরিবর্তন আনা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মকে আরো সম্পৃক্ত করা, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো, অন্যান্য কম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো, ভ্যালু চেইনে নির্ভরতা কমানো, প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়ানো, একীভূতকরণ, কার্বন গ্যাস নির্গমন কমানো, সফলতার মূল্যায়ন এবং আরো বিনিয়োগ বা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা।
বিশ্বের ৮৭টি দেশের দুই হাজার ৮০১ জন ব্যবসায়ীর অনলাইন সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পিডাব্লিউসি। ৫ অক্টোবর থেকে ১১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ে এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এ সময় বাংলাদেশের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের ৫৪ জন মূল ব্যক্তির মতামত গ্রহণ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক লেনদেন এক কোটি ডলারের কমও রয়েছে আবার ১০০ কোটি ডলারের ওপরেও রয়েছে। এসব কম্পানির মধ্যে ২৮ শতাংশের বেশির ভাগ শেয়ার প্রথম প্রজন্মের হাতে, ৫০ শতাংশের বেশির ভাগ শেয়ার দ্বিতীয় প্রজন্মের হাতে, ১৫ শতাংশের বেশির ভাগ শেয়ার তৃতীয় প্রজন্মের হাতে এবং ৭ শতাংশের বেশির ভাগ শেয়ার চতুর্থ প্রজন্মের হাতে।
বাংলাদেশ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপের উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জি বিষয়গুলো নিয়ে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কী ভাবছে তা বোঝা। বাংলাদেশে করা এ জরিপে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কম্পানির সিইও, এমডি বা মালিকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসার প্রথম প্রজন্মের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান মনে করে আগামী পাঁচ বছরে কম্পানির বেশির ভাগ শেয়ারধারী হবে পরবর্তী প্রজন্মের। ৫৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় প্রজন্মের সদস্যরা ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ডে রয়েছেন। বিশ্বে ৫৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় প্রজন্ম ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ডে রয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বোর্ডে দ্বিতীয় প্রজন্ম রয়েছে, ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বোর্ডে এবং ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য পদে দ্বিতীয় প্রজন্ম আছে।
জরিপে আরো দেখা যায়, দেশের বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের ভূমিকা ইতিবাচক। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনকে প্রতিরোধ না করে গ্রহণ করে। ৬০ শতাংশ বাংলাদেশি পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জানায়, কম্পানি এবং পারিবারিক মূল্যবোধ বিষয়ে তাদের স্পষ্ট ধারণা আছে, যা করোনা মহামারিতে তাদের জন্য সহায়ক হয়েছে।