পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইপিডিসি ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক যৌথভাবে ২০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল। এর বিপরীতে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা জামানতও নেয় তারা। তবে ব্রাইটনের দাবি, জামানতের বর্তমান মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু একাধিকবারে ঋণগুলো বিতরণের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঋণ পায়নি ব্রাইটন হসপিটাল। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার জন্য দু’বারে মোট ৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করে আইপিডিসি। পরে আরও ৮ কোটি টাকার ফান্ড ম্যানেজ করার জন্য আট থেকে দশ মাস সময় চাওয়া হয় ব্রাইটনের কাছে। প্রায় এক বছর পর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা থেকে সেই ফান্ড ম্যানেজ করে দেয়া হয়।
২০০৯ সালে ব্রাইটেনের বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতে মামলা করে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। কারণ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপি হয়ে পড়ে ব্রাইটন হসপিটাল। অপরদিকে সময়মতো ঋণ না দেওয়ায় ৮৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্রাইটন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আইপিডিসির পাওনা দাঁড়িয়েছিল ১৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ১১৮ টাকা (সুদসহ)। একই সময়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা (অনারোপিত সুদ বাদে)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ আইপিডিসির পাওনা ৫০ কোটি ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গ্রাহকের দায় প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। যদিও গ্রাহকের দাবি, ১৭ কোটিও নয়, পেয়েছে ১৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ১৫ কোটির বিপরীতে শোধ করতে হবে ৯৫ কোটি টাকা। মূলত একদিকে উচ্চ সুদ অন্যদিকে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদারোপ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ধানমন্ডি শাখার গ্রাহকের (ব্রাইটন হসপিটাল) আবেদন ছাড়াই বেআইনীভাবে ঋণের আসল টাকা ও মুনাফার বিভাজন ব্যতীত ঋণ হিসাবটি কাওরানবাজার শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
ব্রাইটন ও আইপিডিসির মধ্যে চুক্তি মোতাবেক আইপিডিসি নিজে ৯ কোটি ও অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ কোটি টাকার ফান্ড ম্যানেজ করার কথা ছিল। কিন্তু নিজ তহবিল থেকে ৯ কোটি টাকা দিলেও বাকি ১১ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৮ কোটি টাকা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখা থেকে ম্যানেজ করে আইপিডিসি। সব মিলিয়ে ১৭ কোটি টাকা ব্রাইটন হসপিটালকে প্রদান করা হয়। যদিও ব্রাইটনের দাবি, টাকা পেয়েছে ১৫ কোটি, তাও ভেঙে ভেঙে। যথাসময়ে টাকা না দেয়া এবং আইপিডিসি তিন কোটি টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় ব্রাইটন হসপিটাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কারণ চলতি মূলধনের অভাবে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে ব্রাইটন হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা করেছে আইপিডিসি ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। এখন সারাদিনে আর কোনো কাজ করতে পারি না। মামলার পেছনে ছুটতে ছুটতেই দিন শেষ। এছাড়া পুলিশি হয়রানিতো আছেই। আমি ব্যবসাটা আবার চালু করতে চাই। কিন্তু টাকার অভাবে পারছি না। আইপিডিসি থেকে ঋণ নেয়ার এক বছরের মধ্যেই আমাকে খেলাপি ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে রিপোর্ট করা হয়েছে। তাই নতুন করে কোনো ঋণও পাচ্ছি না।
আইপিডিসি ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ব্রাইটনের কাছে আইপিডিসির সুদাসলে পাওনা প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ঋণটি অবলোপন করা হয়েছে। আমরা মূল টাকা পেলে ঋণটি ক্লোজ করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মিলছে না।