ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে বৃহস্পতিবার দৈনিক বণিক বার্তা ও সিটি ব্যাংকের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই পরামর্শ দেন তিনি।
রেহমান সোবহান বলেন, বৈষম্যের কারণে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে ৪৯ বছরেই বাংলাদেশ অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে গেছে।
“বিশেষ করে মাথাপিছু আয়েও আমরা তাদের পেছনে ফেলেছি। রপ্তানি এবং রিজার্ভসহ অর্থনীতির অনেক খাতেই আমরা তাদের পেছনে ফেলেছি। এমনকি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও আমরা তাদের চেয়ে অনেক সফল।”
কিন্তু এখন ‘সামনে তাকানোর সময়’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একসময় প্রায় একই আকারের অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনাম কীভাবে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেল?
“আমাদের রপ্তানি মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলার হলেও তাদের রপ্তানি প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে। ভিয়েতনামে আমাদের চারগুণ বৈদেশিক বিনিয়োগ হচ্ছে।”
“তারা নিশ্চয়ই তাদের দক্ষতা দিয়ে উন্নতি করেছে। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও এগিয়ে যেতে পারি,” বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “একটা সময় ক্ষুধা আর দারিদ্র্য ছিল আমাদের নিত্যদিনের চলার পথের সঙ্গী। সব দিক থেকেই দেশের মানুষের ওপর ছিল বঞ্চনা।
“এ জাতিকে বঞ্চনার গ্লানি থেকে মুক্ত করার জন্য, এ দেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য জাতির পিতার আগমন। আমরা সৌভাগ্যবান। জাতির পিতার রেখে যাওয়া কাজ, তারই দেখানো পথে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।”
কর্মসংস্থান না হলে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে। এজন্য বিভিন্ন খাতে যত ধরনের প্রণোদনা দেওয়া দরকার, আমরা দিয়ে যাচ্ছি।”
সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি গতিধারা সমৃদ্ধ করতে পারলে তার প্রভাব পুঁজিবাজারেও পড়বে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
খেলাপি ঋণ কেন বাড়ছে, তার উত্তর দিতে গিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, “দেশে যদি ২৫-২৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ হার হয়, তাহলে খেলাপি ঋণ কেন বাড়বে না?”
শিল্পায়নের গতি আশানুরূপ না হওয়াও এর কারণ হিসেবে দেখান তিনি।
“শিল্পায়নের প্রধান উপাদান হচ্ছে সুদ হার। এই সুদ হারে কীভাবে বিনিয়োগ হবে? তাই শিল্পায়ন হবে এমন একটা হারে সুদ নামিয়ে আনতে চাই।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আসলে আমাদের দেশে জিডিপি‘র তুলনায় কর হার কম নয়। এটা ৯-১০ শতাংশ বলা হলেও বাস্তবে এটা বেশি। যেমন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা কর মওকুফ করছি বলেই কিছুটা কম দেখাচ্ছে।
“দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পদ্মা সেতুসহ আরও বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোতে কর নেওয়া হচ্ছে না। সেগুলো হিসাব করা হলে আমাদের কর-জিডিপির হার প্রায় ১৪ শতাংশে ঠেকতে পারে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তখন অনেকেই এর সমালোচনা করেছিল। কিন্তু এখন তিনি সফল হওয়ার পর সেই সমালোচনা বন্ধ হয়েছে।
“কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই উদ্যোগ না নিলে দেশের শিল্পের বিদ্যুৎ চাহিদা কোথা থেকে হত? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এ অগ্রযাত্রা আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদও এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।