সোমবার (০৮ মার্চ) আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ভবনে ইস্যু ম্যানেজারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘রোল অব ইস্যু ম্যানেজারস আইপিও অ্যাপ্লিকেশন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংকারদের উপরই পুরো ব্লেমটা আসে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অডিটরদের উপর আসে। আমরা তো পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি। দেশে প্রচলিত আইপিও রুলস যেটা আছে বা অন্যান্য রিলিভেন্ট রুলস যা আছে তা পরিপালন করেই আমরা নিউ সিকিউরিটিজ ইস্যু করি। তারপরেও কেন আমার বন্ধুরা, সহকর্মীরা সমালোচনা শিকার হচ্ছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমার মার্চেন্ট ব্যাংকার কোনো একজন যদি সমালোচনার মধ্যে পরে আমিও সেটার সাথে সম্পৃক্ত। কারণ আমি মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন লিড দিচ্ছি। এই মূহুর্তে আমার কলিগ বা মার্চেন্ট ব্যাংকারের যদি কোনো সমালোচনা সম্মূখীন হয় আমি মনে করি সেটা আমার ব্যক্তিগত সমস্যারই অংশ।
তিনি আরও বলেন, আইপিও শেয়ার লেনদেনের শুরুতেই যখন শেয়ার দর ৩০ টাকা বা ৪০ টাকা হয়, তখন আইপিও শিকারীরা বিক্রি করে টাকাটা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তারা মূলত ক্রিমটা নিয়ে ভেগে পড়ছে।২০০৫ বা ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোনো আইপিওর ১০০ টাকার শেয়ার ২০০ টাকা হয় নাই। দুই-একটা হয়ে থাকলে হতে পারে। একটা আমার মনে আছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৫০ টাকা প্রিমিয়ামে আসছিল, সেজন্য ওইটার দর ২০০ টাকা হয়েছিল। কিন্তু আজকে আপনি আলু, পটল যাই নিয়ে আসুন না কেন, সেটার দাম চার থেকে পাঁচ গুন হয়ে যাচ্ছে। যখন চার থেকে পাঁচ গুন হচ্ছে, সেই টাকাটা কিন্তু আইপিও শিকারীদের মাধ্যমে মার্কেটের বাইরে চলে যাচ্ছে। আজকে কোনো কোম্পানি লিস্টিং হওয়ার পরে যদি ১০ টাকার শেয়ার ১২ টাকায় ট্রেড হতো, এক বছর পরে ডিভিডেন্ড ডিক্লারেশন হলে সেটা বাড়ত। তাহলে ডিভিডেন্ডের জন্য বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ধরে রাখতো। শেয়ার দর কেনো ১২ টাকায় বা ১৫ টাকায় না হয়ে সেটা ২৩ টাকায় বা ৪০ টাকায় হচ্ছে। কমিশনের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। আগের কমিশন ৫০ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার দিয়ে গেল। কিন্তু সেটাও দেখা গেল কাজ করছে না। সকাল বেলা পৌনে ১০টার সময় ৫০ শতাংশ সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমায় অফার দিয়ে রাখে।
এছাড়াও তিনি বলেন, এর আগে আইপিও রুলের যখন পরিবর্তন হয়েছে, সেখানেও প্রথম দিনেই ফ্রি ফ্লোট শেয়ার বেশি করার প্রস্তাব দিয়েছি উল্লেখ করে বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, আজকে যদি রবির প্রথম দিন সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার শেয়ার এভেইলেবল থাকতো, তাহলে কি ৭০ টাকায় শেয়ার নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো কেউ। কেউ দেখতো না। তাহলে যে বিনিয়োকারী ৭০ টাকায় কিনে আজকে ৪০ টাকায় বা ৪৫ টাকায় আসার পরে কান্নাকাটি করছে। তাকে কে ৭০ টাকায় কিনতে পরামর্শ দিয়েছে। আজকে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী আছে, যারা বলছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেল করে দিচ্ছে। আচ্ছা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেল করবে না তো কি করবে, তারা কি আপনাদের দায়িত্ব নিয়েছে যে স্মল বিনিয়োগকারীদের প্রফিট করিয়ে দিবে। এই যে অন্ধের হাতি দেয়ার মতো একেক পাশ থেকে একেক সমালোচনা করি, এই সমালোচনা থেকে আমাদের বের হতে হবে।
বিএসইসির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ছায়েদুর রহমান বলেন, প্রথম দিনে কিভাবে শেয়ারের সাপ্লাই দিবে, যেহেতু আমাদের এখানে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্পন্সর বা ডিরেক্টরদের ৩০ শতাংশ শেয়ার হোল্ড করতে হবে। এই ৩০ শতাংশ শেয়ার বাদে বাকি ৭০ শতাংশ ফ্রি করে দেন। প্রথম দিন থেকে আমরা কিভাবে এই সাপ্লাইকে বাড়াতে পারি এবং যদি নিচ থেকে প্রাইস ক্রিয়েট হয় তাহলে কাউকে নিয়ে কোনো সমালোচনা হবে না।
কোনো কোম্পানি এসেই ১০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে ১০ শতাংশ বা ১২ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিব। একটা শেয়ার যখন ১০ শতাংশ বা ১২ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিবে ১ টাকা দিবে বা ১.২০ টাকা দিবে বা ১.৫০ টাকা দিবে, তো ১.৫০ টাকার জন্য আপনি কতো টাকা ইনভেস্ট করবেন।
ক্যাপিটাল রেইস করতে কোনো অনুমোদন লাগে না উল্লেখ করে বিএমবিএ সভাপতি বলেন, ক্যাপিটাল রেইস করতে অনুমোদন না লাগার কারণে ক্যাপিটাল এখন তথাকথিত কনসালটেন্টরা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে ক্যাপিটাল রেইস করে ফেলে। যখন আপনি আইপিও করতে চাচ্ছেন তখন রিকোয়ার ডকুমেন্ট ওখান থেকে পাচ্ছে না। কারণ আপনার দরকার হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একাউন্টে থেকে কোম্পানির একাউন্টে টাকা আসতে হবে। কিন্তু সে তথাকথিকভাবে ক্যাপিটাল রেইস করে দিয়ে সার্টিফাইড কপি এনে সে কনসালটেন্টসি করে তার ফিস নিয়ে চলে গেছে। এখন আপনি যখন ইস্যু ম্যানেজমেন্ট করতে গেছেন তখন আপনার জন্য উভয় সংকট হয়ে গেছে। তাই আমরা মনে করি এই পুরানো অবস্থা কমিশন যদি বিষয়টি আবার সদয় বিবেচনা করে এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের কাজের পরিধি এমনিতেই অনেক ছোট। আমাদের এখন কাজ খুব কম। এখন আমরা মনে করি যেকোনো ধরনের ক্যাপিটাল রেইস বা বন্ড হোক, যাই হোক আমার বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে ইমপোর্ট করা হোক।
এতে সভাপতিত্ত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। আর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।