বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে, গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রতিদিনই গ্রাহক সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। ২০২০ সালের জানুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট কোটি নয় লাখ ১৬ হাজার। যা তার আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল সাত কোটি ৯৫ লাখ আট হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ১ দশমকি ৮ শতাংশ।
জানা গেছে, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এমএফএস তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা কমেছে। জানুয়ারি শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৩২ লাখ ৯৪ হাজার। যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল তিন কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৮১ হাজার ৫৩৭ জন।
এমএফএসে গেল জানুয়ারিতে মোট ২৩ কোটি ৯০ হাজার ১৯২টি লেনদেনের মাধ্যমে ৪২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা ২২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৫৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী, আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে জানুয়ারিতে টাকা জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। যা আগের মাসের চেয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এ সময়ে উত্তোলন করেছে ১৩ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বরের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
আলোচিত সময়ে এমএফএসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১০ হাজার ৭৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ প্রায় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৭২ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সরকারি বিল পরিশোধ ১৫২ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৭৮২ কোটি টাকা।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচবারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারবেন। আর মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়। আগে প্রতিদিন দুইবারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা করতে পারতেন একজন গ্রাহক। আর মাসে ২০ বারে এক লাখ টাকা ক্যাশ ইন করতে পারতেন গ্রহক।