উৎপাদনশীল খাতে রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে চিন্তা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় অবকাঠামো উন্নয়নে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতের অর্থ নিয়ে দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। তহবিলটির নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ)। আপাতত বিদ্যুৎ খাতে ও বন্দর উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে এই তহবিলের অর্থ। তহবিলটির বার্ষিক বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ২০০ কোটি ডলার।
নতুন গঠিত তহবিলটি থেকে প্রথম ঋণ পাচ্ছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকার সমান, যা দেওয়া হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরোয়। এতে রিজার্ভ থেকে তিন বছরে ৫২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো বা ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে অর্থ বিভাগ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে।
রিজার্ভের টাকায় উন্নয়নকাজে ব্যবহারের সরকারি উদ্যোগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। কেউ বলছেন, রিজার্ভ দুঃসময়ের সঙ্গী। তাই খরচের বিষয়ে দীর্ঘ মেয়াদের কথা মাথায় রাখতে হবে। সেটা যেন দেশের উন্নতিতে কাজে লাগে।সচেতনভাবে এর ব্যবহার করতে হবে। আবার কেউ বলছেন, ছোট আকারের এমন তহবিলে বিদেশি অংশগ্রহণ থাকলে ভালো সুফল পাওয়া যেত। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আগে বিমান কিনতে একই প্রক্রিয়া মেনে সোনালী ব্যাংককে ডলার দেওয়া হয়েছিল। এবারও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। ছয় মাসের আমদানি খরচের সমপরিমাণ মজুত না থাকলে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার দেওয়া হবে না।
রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলেছেন দেশের অর্থনীতিবিদগণও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. আতিউর রহমান বলেন, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় সরকার সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগেও এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড গঠন ও বোয়িং কেনার সময় রিজার্ভের অর্থ খরচ করা হয়েছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেখানে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তার মাধ্যমে যেন ফরেন এক্সচেঞ্জ সাশ্রয় হয়, একই সঙ্গে ফরেন এক্সচেঞ্জ আয়ও হয়। অর্থাৎ যত খরচ হবে, তার চেয়ে যাতে বেশি অর্থ আসে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আগে রিজার্ভ ব্যবহার হলেও এখন এটার আনুষ্ঠানিক রূপ পেল। এই ঋণে ঝুঁকি নেই। কারণ, সরকার সভরেন গ্যারান্টি দেবে। সার্বিক বিবেচনায় এই ফান্ড থেকে খুবই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। আর এই রিজার্ভ ফান্ড থেকে একবারে বেশি খরচ বা বিনিয়োগ করা যাবে না। সরকারকে ধন্যবাদ যে রিজার্ভ ফান্ড থেকে সরকার ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেওয়ার কথা বলেছে।
প্রসঙ্গত, গত এক দশকে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। ২০১০ সালে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো। বর্তমানে তা বেড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিগত সময়ে রপ্তানি খাত চাঙ্গা হওয়া এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের কারণে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার এই রিজার্ভ। বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, সারা বিশ্বেই বেড়েছে রেমিটেন্সের প্রবাহ। বিগত ২০১৭ সাল থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহের জন্য উজ্জ্বলতর বছর চলে আসছে।