অপরদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার পুঁজিবাজারের দর দ্রুত ওঠানামা করার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কোম্পানিগুলোকে অধিক পরিমাণে বাজারে নিয়ে আসার সুযোগ দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকা ফেরত নেয়ার বিষয়ে সরকার একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জনগণের শেয়ার থাকায় তালিকাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিতে হবে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির ১২তম বৈঠকে এ কথা বলেন তারা। বৈঠকে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ বলেন, পুঁজিবাজারের মূল উদ্দেশ্য হল প্রাপ্ত পুঁজি সরাসরি শিল্পে বিনিয়োগ করা। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে, দেশের প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু পুঁজিবাজার দ্রুত ওঠানামা করছে। পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষও জড়িত। এ কারণে পুঁজিবাজারে ধস নামার কারণে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে তাত্ত্বিক দিক বিবেচনা করে পুঁজিবাজার দ্রুত ওঠানামার ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (এসএমই) বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি গত দু-তিন মাসে ২০ উদ্যোক্তাকে দেখেছেন, যারা শত শত কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছেন। খেলাপি ঋণের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ আছে। এতে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাও বিপর্যস্ত হয়। ঋণ খেলাপির বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ওপর তদারকি জোরদার ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।
কমিটির সভাপতি বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পুনর্গঠন করা হয়েছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অভিজ্ঞ এবং দক্ষ লোকদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। এতে মানুষ উপকৃত হবে, দেশও উপকৃত হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের রিজার্ভের মালিক জনগণ। অথচ এ রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িতরা কেউ ধরা পড়েনি। তিনি এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চান। তিনি মানুষকে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলেন।
কমিটির সভাপতি বলেন, দেশের প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে রুগ্ন হয়ে গেছে। এছাড়া দেশ থেকে মুদ্রাপাচার হচ্ছে। এই মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি জোরদার করতে হবে। তিনি ব্যাংক খাতে বিদ্যমান সমস্যার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার পুঁজিবাজারের দর দ্রুত ওঠানামা করার কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
সংসদীয় কমিটির সদস্য মুজিবুল হক বলেন, শেয়ারবাজারে ধস, ওঠানামা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যতে আরও কী পদক্ষেপ নেয়া হবে সে সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, কেউ ঋণ নিয়ে যথাসময়ে ফেরত দেয়। আবার অনেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়। এ খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য গৃহীত উদ্যোগ এবং যারা নিয়মিত ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান।
কমিটির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন কিনা- এ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে নাকি সরকারের নির্দেশনা নিয়ে করতে হয় বিষয়গুলো জানতে চান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করে। এছাড়া কিছু কিছু কাজ সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে করতে হয়। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকের মার্কেট বেইজড সুদহার করা হয়েছে, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে সব ব্যাংক ব্যাংক মিলিয়ে সাড়ে ১০ হাজার শাখা আছে। বর্তমানে ক্লাসিফাইড লোন অনেক কমে গেছে এবং অর্থের তারল্য সংকট একেবারেই নেই।