তিনি বলেন, ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রবীণদের জন্য কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে, তবে যুবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই’।
বছরের এ সময়ে মশাবাহিত রোগ দেখা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি এবং আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনাকে জনগণের বড় রকমের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে এবং আপনার হাত সঠিকভাবে ধুতে হবে।’
শেখ হাসিনা একই সঙ্গে জনগণকে টিস্যু পেপারসহ ময়লা এখানে-সেখানে ছুড়ে না ফেলে বর্জ্য ফেলার জন্য একটি পৃথক ঝুড়ি ব্যবহারের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এর কারণে সংক্রমণ ছাড়াতে পারে, কাজেই আমি সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সর্দিজনিত রোগে ভুগছেন তাদের এই ভাইরাসের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু এ জন্য অযথা মাস্ক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ‘সবাই মাস্ক এবং স্যানিটাইজার কেনার জন্য যেন পাগল হয়ে গেছে এবং তারা বিপুল পরিমাণে এগুলো কিনে নিচ্ছে, এটি কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্ব জুড়েই ঘটছে। এটি পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়,’।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে আরো বেশি পানি পান করতে হবে এবং ভিটামিন 'সি'সহ তরল খাবার এবং ফল খেতে হবে।
করোনাভাইরাস আক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকারের পদক্ষেপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে তিনটি হাসপাতাল করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
পাশাপাশি, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং করোনাভাইরাস সৃষ্ট যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী- যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালের শয্যা তৈরি রাখা হয়েছে।
তার সরকার করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে প্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিশেষ বুলেটিন প্রচার করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সব দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে সেসব দেশের নাগরিকদের জন্য সরকার ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ স্থগিত করেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি এমনভাবে উদ্যাপিত হবে যাতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে জনগণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে না পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণঘাতী ভাইরাস যেহেতু বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, কাজেই জনগণের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি মনোনিবেশ করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। সে কারণেই আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন কর্মসূচি পুনরায় সাজিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন। তাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই আমরা কর্মসূচি (জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন) নতুন করে সাজিয়েছি, যদিও এটা আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক ছিল’।
প্রধানমন্ত্রী সিওভিআইডি-১৯ নামক প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ারও আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই ভাইরাসটি কয়েক দিনের জন্য থাকবে তারপরে এটি শেষ হয়ে যাবে। তাই এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শীত থেকে গ্রীষ্মে যাওয়ার কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই শীতজনিত রোগগুলো এ সময় দেখা দেয় এবং আমি অবশ্যই বলতে পারি যে, স্বাভাবিক সর্দিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন দেশের জন্য একটি বড় ঘটনা। তবে আমরা এটি অন্যভাবে উদ্যাপন করব, যাতে জনসমাগম কম হয় এবং তারা (জনগণ) ঝুঁকিতে না পড়ে।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, সরকার বড় আকারে এটি উদ্যাপনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং লাখ লাখ লোক এতে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস’র কারণে আমরা জনগণের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে কর্মসূচিগুলো পুনরায় সাজিয়েছি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে দেশের মানুষের কল্যাণ করা।
তিনি বলেন, ‘এ কারণেই আমি এবং আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জনসাধারণের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের কর্মসূচি পুনর্নির্ধারণের সম্মতি দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশের অন্যান্য অতিথিরা এই উদ্যাপনে অংশ নিতে ভীষণ আগ্রহী ছিলেন। তবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পটভূমির প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠানসূচি পরিবর্তন করা হয়েছে, যা প্রায় শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে শিশু সমাবেশসহ অনেক কর্মসূচিই স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আগামী ১৭ মার্চ সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য, অর্পণ এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণসহ অন্যান্য কর্মসূচি যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। তবে, টুঙ্গিপাড়ায় শিশু-কিশোর সমাবেশ সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হবে।
খবর: বাসস।