তিন মাসে আগে যে চীনে ব্যাপক আকারে নতুন এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল, সেখানে মৃতের অধিকাংশেরই বয়স ৭০ বছরের বেশি এবং তাদের অন্য অসুস্থতাও ছিল।
এই সময়ে সারাবিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে বিবিসি দেখেছে, আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি একশ জনে একজন রয়েছে মৃত্যুঝুঁকিতে।
নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ; মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ হাজারের বেশি চীনা নাগরিক; মৃতদের মধ্যেও ৩ হাজার ১৩৬ জনই চীনের।
চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র মৃত্যুর ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে যে ছক দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, মধ্যবয়সীদের চেয়ে বয়স্কদের মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বেশি।
ত্রিশের নিচে বয়স এমন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা অনেক কম ঘটেছে চীনে; এই বয়সী সাড়ে চার হাজার রোগীর মধ্যে মারা গেছেন আটজন।
যে কোনো রোগে শিশুরাই সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও করোনাভাইরাসে চীনে নয় বছরের কম বয়সী কারোই মৃত্যু ঘটেনি।
বৃদ্ধদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্র বা শ্বাসকষ্টে ভুগতেন, তাদের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটেছে; দেখা গেছে এই সংখ্যা অন্যান্য রোগীদের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি।
গবেষকরা বলছেন, ৮০ বছরের এক চীনা পুরুষ আর ইউরোপ ও আফ্রিকায় বাস করা একজনের মৃত্যুঝুঁকি একই রকম নয়। তবে ইউরোপের ক্ষেত্রেও বয়স্কদের মৃত্যু হার বেশি দেখা যাচ্ছে।
সঠিক চিকিৎসা মিলছে কি না, তাও কভিড-১৯ রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতিতে ভূমিকা রাখে।
চীনের তথ্য অনুযায়ী, নারীদের তুলনায় নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষরাই মারা গেছেন বেশি।
করোনাভাইরাসে প্রতি এক হাজার জনে নয়জনের মৃত্যুর তথ্য মিললেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃত্যুর হার আরও কম হতে পারে, কেননা অনেক রোগীর তথ্যই হয়ত এই পরিসংখ্যানে আসেনি, যারা রোগে ভুগে সেরেও উঠেছেন।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হানকক বলেছেন, তাদের হিসেবে শতকরা দুজনের প্রাণ নিয়েছে কভিড-১৯; তবে মৃত্যুহার এর কিছু কমও হতে পারে।
বিশ্বের অন্য যে সব রোগে মানুষের মৃত্যু বেশি ঘটছে, তার তুলনায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু এখনও অনেক কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদজনিত রোগে। স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ লাখের মতো।
শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণে বিশ্বে বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫ লাখের মতো। ডায়রিয়ায় মারা যায় ২০ লাখের বেশি মানুষ। এছাড়া যক্ষ্মা ও এইডসে মৃত্যুর সংখ্যাও ২০ লাখের কাছাকাছি।
বিবিসি বলছে, যেহেতু সর্দি-কাশি হলে অনেকেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না, তাই কভিড-১৯ রোগটি সাধারণ ফ্লু থেকে বিপজ্জনক কি না, তা বোঝা সহজ নয়।
ফলে এও জানা সম্ভব নয় যে বছরে কতজন ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা অন্য কোনো নতুন ভাইরাসের কারণে ভোগেন।
তবে প্রতি শীত মৌসুমে যুক্তরাজ্যে ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যায়।
পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত হাতে এলে করোনাভাইরাসের এই সময়ে কতজন মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে, তার সুষ্পষ্ট চিত্র মিলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
রোগী বয়স, লিঙ্গ, অন্যান্য রোগ আছে কি না এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে আপাত ধারণা করা গেলেও নতুন এই ভাইরাস নিয়ে সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়াকে পিএইচডি করার মতো এক জটিল কাজ বলে মনে করছে গবেষকরা।
যুক্তরাজ্যের ইমপেরিয়াল কলেজের একটি গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসি জানাচ্ছে, বিভিন্ন দেশে মৃদু ও সঙ্কটাপন্ন রোগী শনাক্ত হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। আর এতে করে কোন শারীরিক দশায় রোগী কী রকম ঝুঁকিতে রয়েছে, তা বোঝা কঠিন।
করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, শ্বাসতন্ত্রের যে কোনো সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হাত ধুতে হবে, সর্দি-কাশি রয়েছে এমন ব্যক্তি সংসর্গ থেকে দূরে থাকবে হবে এবং যখন-তখন চোখ-নাক এবং মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।