তিনি বলেন, আমরা কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় পড়তে পারার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ভার্চুয়াল সমাবর্তনে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
এর আগে দুপুর আড়াইটায় কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে সমাবর্তন শুরু হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি অনুষ্ঠানেরও উদ্বোধন করেন।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩তম সমাবর্তন মহামারির মধ্যেও আয়োজন করায় আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে এ সমাবর্তন অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, গত বছর থেকে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে তাদের শিক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা পা দিয়েছি। আর তার চাক্ষুস প্রমাণ এ সমাবর্তন। আমাদের ২০৪১ সালের লক্ষ্য রয়েছে। আমাদের ২১০০ সালের জন্য আরো একটি লক্ষ্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের চতুর্থ শিল্পবিল্পব চ্যালেঞ্জের সাথে সাথে বেশ সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। আমাদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষায় বিনিয়োগের কথা বলেছেন। আমাদের দেশের গতি ধরে রাখতে হলে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক বেশি নজর দিতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই অনলাইন শিক্ষার কথা ভাবছিলাম। করোনা আসায় তা আরো একধাপ এগিয়ে নিলো। আমরা আরো পাঁচ-সাত বছর পর যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেতাম এখনি তা করছি। আমরা এখন যা শিখছি তা হয়তো সামনে কাজে নাও লাগতে পারে, সামনে আমাদের নতুন কোন শিক্ষা মডিউল হয়তো ফলো করতে হবে।
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় তা বলার অবকাশ রাখে না। যারা এবার গ্যাজুয়েট হলে তাদের দায়িত্ব অনেকগুনে বেড়ে গেল। আপনার পরিবারের জন্য এখন অবদান রাখতে হবে। আপনার কর্মজীবনে অবদান রাখতে হবে। এমন কিছু করতে হবে, যাতে করে আপনার পিতা-মাতা আপনাকে নিয়ে গর্ব করতে পারেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ে আপনাদের এ অর্জন গর্ব করার মতো।
তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর জন্য। যে লোকটির জন্য আমরা আজ স্বাধীন দেশের বাসিন্দা তাকে জাতি আজীবন মনে রাখবে। আমরা দিনকে দিন উন্নত দেশের কাতারে যাচ্ছি। আশা করি আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশের কাতারে যেতে পারবো।
সালমান এফ রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন আমাদের ডিজিটাল দেশের স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আরো একটি স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ চলছে। আমরা কৃষিতে উন্নতি করছি। আমরা বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। নারীদের কর্মক্ষেত্রে যোগ করতে পেরেছি। অনেক নারী সাবলম্বী হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। আমরা আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি করেছি। ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনতে পেরেছি। এখন ছেলেদের মতো মেয়েরাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছে। আমরা চাকরি ক্ষেত্রেও উন্নতি করেছি। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েও অন্যতম এক মানবিক দৃষ্টান্ত রেখেছে।
আমি বিশ্বাস করি আপনারা যদি কঠোর প্ররিশ্রম করেন তাহলে কোনো না কোনো সময়ে সফল হবেনই, যোগ করেন সালমান এফ রহমান।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ কাসেম বলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে নাম করুক। করোনার মধ্যেও আমরা আমাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখিনি। অনলাইনে আমরা পড়াশোনা, গবেষণাসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু রেখেছি। যেসব শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা করোনাকালে চাকরি হারিয়েছে আমরা তাদের টিউশন ফি নিচ্ছি না। আমরা বিশ্বকে একটি সুন্দর পৃথিবী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যারা এবার গ্রাজুয়েট হয়েছেন, তাদের বলতে চাই আপনারা ভাগ্যবান- কারণ আপনারা এমন সময়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চলছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, আজ আমি খুবি আনন্দিত। আমরা তরুণদের সহযাত্রার সঙ্গী হতে পেরে ভাগ্যবান মনে করছি নিজেদের। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য বড় একটি অর্থ খরচ করি। এনএসইউ ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম সরকার অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আপনারা আপনাদের জীবনের যে মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন আজ সেই কাঙিক্ষত মুহূর্ত।