কিন্তু মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে কাল এমন সমীকরণ থেকেও ম্যাচটা অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গেছে কলকাতা! চেন্নাইয়ে কাল মুম্বাইয়ের দেওয়া ১৫২ রানের লক্ষ্যে নেমে কলকাতা শেষ পর্যন্ত করতে পেরেছে ৭ উইকেটে ১৪২। এভাবেও ম্যাচ হারা যায়!
কলকাতা–সমর্থকেরা নিশ্চিতভাবেই ফুঁসছেন। সে ক্ষেত্রে যদি শাহরুখ খানের কথায় তাঁদের একটু মন গলে আর কী! কেকেআর ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অন্যতম প্রধান মালিক বলিউডের এই অভিনেতা। তিনিও কাল কলকাতাকে এভাবে হারতে দেখে ভীষণ হতাশ। সাকিব-রাসেলদের ব্যর্থতার জন্য শাহরুখ কলকাতার সমর্থকদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।
এমনিতেই ক্রিকেটে এখন জুয়াড়িদের আনাগোনা, আইপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তা আরও বেশি। সে কারণে এ রকম ম্যাচের ক্ষেত্রে ম্যাচ পাতানোর শঙ্কাটা আরও বেড়ে যায়।
অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো শঙ্কাটা অমূলক। কালকের ম্যাচেই ধরুন, রাহুল চাহার এত দারুণ বোলিং করলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে, কলকাতার প্রথম চার ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়েছেন। যশপ্রীত বুমরা-ট্রেন্ট বোল্টরা শেষ দিকে কী দারুণভাবে চেপে ধরেছেন কলকাতার ব্যাটসম্যানদের। সাকিবদের হারের তাই ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাই আছে।
কিন্তু জুয়াড়িদের উৎপাতের কারণে ক্রিকেটের মতো অনিশ্চয়তায় পূর্ণ খেলাটার অনিশ্চয়তার রোমাঞ্চই এখন সংশয়ে ছেয়ে যায়। সংশয়বাদী মন প্রশ্ন তোলে, আসলেই এটা ক্রিকেটের অনিশ্চয়তা, নাকি অন্য কারও হাত আছে এখানে? কাল কলকাতার হারের পর সংশয়টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
মাথাচাড়া দেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত কার্তিক আর রাসেলের ব্যাটিং। এখানেও ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু সংশয় তো সংশয়ই—একবার মনে গেঁথে গেলে আর যুক্তি মানতে চায় না। কার্তিক ও রাসেল উইকেট টিকিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত যেতে চেয়েছিলেন। রান যেহেতু অত বেশি দরকার ছিল না, তাই আরও দু-তিন ওভার দেখেশুনে খেলে শেষ দু-তিন ওভারে পিটিয়ে রান তুলে ফেলবেন...এ-ই হয়তো ছিল কার্তিক-রাসেলদের পরিকল্পনা।
কিন্তু তা কাজে লাগেনি। সে কারণেই স্কোরবোর্ডে মিল দৃষ্টিকটু দুই পরিসংখ্যানের দেখা। কার্তিক ৭২.৭২ স্ট্রাইক রেটে ৮ রান করে অপরাজিত, রাসেল ৯ রান করেছেন ৬০.০০ স্ট্রাইক রেটে! টি-টোয়েন্টিতে এমন ব্যাটিং!
অবশ্য ওপেনিং জুটি বাদ দিলে কলকাতা তো সেভাবে কখনোই ব্যাটিংটা ভালো করতে পারেনি। ৫৩ বলে ৭২ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে শুভমান গিল (২৪ বলে ৩৩) আউট হওয়ায়। এরপর মরগান-ত্রিপাঠিরা ফিরলেন, রানের গতিতেও বাঁধ পড়ল। দলকে ১২২ রানে রেখে ১৫তম ওভারের শেষ বলে আউট আরেক ওপেনার নিতিশ রানাও (৪৭ বলে ৫৭)। দুই বল পর দলকে ১২২ রানেই রেখে সাকিবও আউট! দুর্দান্ত বোলিং (৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ১ উইকেট) করলেও সাকিব কাল ব্যাট হাতে ভালো করতে পারেননি।
এরপর কার্তিক আর রাসেলের ব্যাটিং মিলিয়ে রান তাড়ায় কলকাতার একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা। সমর্থকদের তাই এ নিয়ে হতাশা থাকারই কথা। শাহরুখ খানও ভীষণ হতাশ। বলিউড কিংবদন্তি টুইটারে নিজের দলের হয়ে ক্ষমা চেয়ে লিখেছেন, ‘একেবারে কম করে বললেও বলতে হয়, খুবই হতাশাজনক পারফরম্যান্স। কেকেআর–ভক্তদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।’
গত কয়েক বছরে কলকাতার হয়ে ব্যাটে-বলে ঝড় তোলা আন্দ্রে রাসেলও একমত শাহরুখ খানের সঙ্গে। ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ হলেও বল হাতে কাল আলো ছড়িয়েছেন রাসেল, মাত্র ২ ওভার বল করেই ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট!
কিন্তু দল এভাবে হেরে যাওয়ায় হতাশ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার ম্যাচের পর বললেন, ‘এটাকে (শাহরুখ খানের টুইট) আমিও সমর্থন করি। কিন্তু দিন শেষে এটা ক্রিকেট ম্যাচই, এখানে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে আপনি কোনো কিছু নিয়েই নিশ্চিত থাকতে পারবেন না।’ ব্যর্থতা থেকে ‘শিক্ষা নেওয়া’র চিরায়ত বাণীও ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন রাসেল।