শনিবার (১৭ এপ্রিল) অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) উদ্যোগে এক ভার্চ্যুয়াল সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য ও উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যাত্রাকে মসৃণ করতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আরএপিআইডি) ও এশিয়া ফাউন্ডেশন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের করব্যবস্থা চূড়ান্ত রকমের ব্যবসা–অবান্ধব। এ কারণে ব্যবসা বন্ধ করেই দেওয়া উচিত। আমরা যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করি, আমরা কাল থেকে কান ধরে ছেড়ে দিতে চাই। লাভ হোক আর লোকসান, যা-ই হবে, কর দিয়েই যাবেন। যারা কর দেয় না, তারাই ভালো থাকবে। তারা আরও বড় বড় ব্যবসা করবে আর আমরা মরব। এই ধরনের ব্যবসার মধ্যে আর আমরা নেই। করব্যবস্থা ঠিক করেন। অন্যথায় বর্তমান ব্যবসাই থাকবে না, নতুন বিনিয়োগের তো প্রশ্নই ওঠে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যদি কর সংগ্রহকারী হিসেবে থাকে এবং সারা জীবন শুধু বলে “শুনছি”, কিন্তু বাস্তবে কোনো প্রতিফলন না দেখি, তার মানে বাংলাদেশে আপনারা কোনো বিনিয়োগ চান না। বলে দেন, আমরা বন্ধ (কারখানা) করে ট্রেডার হয়ে যাই। কারণ, ট্রেডিং ব্যবসা ভালো। উৎপাদন করে এই মরার খাটুনি যুক্তিসংগত নয়।’
পণ্য রপ্তানি বাড়াতে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়ে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রায় ১০০ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছিল। একই সময়ে ভিয়েতনামের জুতা রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের। তাদের শীর্ষ পাঁচটি জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে। ভিয়েতনামে যৌথ বিনিয়োগে স্থাপিত একটি কোরিয়ান কোম্পানি ১০০ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করে। আর আমরা সারা বছর সবাই মিলে সেই পরিমাণ জুতা রপ্তানি করছি। এটিই আসলে এফডিআইয়ের মূল শক্তি।’
এছাড়াও তিনি বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বে এফডিআইয়ের হার অর্ধেক হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ আছে। বিধিনিষেধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্র্যান্ড চীনের কাপড় নেবে না। সে জন্য ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশে বস্ত্রকল হচ্ছে। বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিতে পারে। তা ছাড়া মিয়ানমার থেকে ব্যবসা ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ এখনই।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও বক্তব্য দেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নিহাদ কবীর, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আরএপিআইডির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।
নিহাদ কবির বলেন, ‘আজ বিডাতে গেলে সমস্যার সমাধান হয়। তবে ওপরের লেভেলে (উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা) কথা বলত হয়। যাঁরা বিডাতে কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। কিন্তু তাঁরা শিল্পায়নের বিষয়ে প্রশিক্ষিত নন।’ তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ সরকারের অনেক কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীরা লোকজনকে ঠকানোর কাজ করেন। আসলে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, সেভাবে চোর–ছেঁচড়দেরও মূল্যায়ন করা হয় না।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীদের সম্মানের সঙ্গে মূল্যায়ন না করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আসবেন না। সিঙ্গাপুর বছরের পর বছর হাত জোড় করে অনুরোধ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিজেদের দেশে এনে আজকের অবস্থায় আসতে পেরেছে। আমরা মনে করি, সবকিছু সাজানো–গোছানো আছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চলে আসবে। কিন্তু তাঁরা কেন আসেন না, সেটি আমরা একবারও জিজ্ঞাসা করি না।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনাম সাতটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে। আর আমরা ভুটানের সঙ্গে এফটিএ করেছি। আমার নিজের জেলাতেও ভুটানের চেয়ে বেশি মানুষ আছে। আমার জেলার অর্থনীতিও ভুটানের চেয়ে অনেক বড়।’