বিবিসি রেডিও ২ এর উপস্থাপক স্টিভ রাইট তার শো'তে ডা. হিলারি জোন্সকে করোনার অসুস্থতা সম্পর্কিত বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্ন করেছিলেন। জনমানসের ভীতি কাটাতে তিনি এমন ৩৮টা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা সবার জন্য জরুরি। তাই জনজিজ্ঞাসার উত্তরগুলো অর্থসংবাদের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো :
১) হ্যান্ড ওয়াশিং কি ভাইরাসকে পরাজিত করার একমাত্র উপায়?
হ্যান্ড ওয়াশিং অবশ্যই জরুরি, তবে এটাই একমাত্র উপায় নয়। আমরা টিস্যুও ব্যবহার করতে পারি এবং সামাজিকভাবে নিজেকে খুব বেশি লোকের থেকে দূরে রাখতে পারি।
২) করোনভাইরাস কি বছরের পর বছর ধরে আছে?
এটি ঠিক নয়, এটি কেবলমাত্র ডিসেম্বরের পর থেকে শুরু হয়েছে। তবে অন্যান্য ভাইরাস ছিল।
৩) এই মহামারী কি শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে?
এটি শীঘ্রই কোনও সময় শেষ হবে না, আমরা মাত্র কয়েক মাস হল এটা সম্পর্কে জানতে পেরেছি, তাই কেবল ধৈর্য ধরুন।
৪) মাস্ক পরলে কি আমার করোনা ঝুঁকি কম করবে?
মাস্ক করোনা প্রতিরোধে সত্যই সহায়তা করে এমন কোনও প্রমাণ নেই। বাস্তবে এটি ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে কারণ মাস্ক পরার ফলে আপনি আরও আপনার মুখের স্পর্শ করেন। তবে মেডিকেল সেবার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এটা প্রয়োজন।
৫) কাশি হলেই কি কাউকে আইসোলেশনে পাঠানো উচিত?
কাশি হলেই পাঠাতে হবে এমনটি নয়। যদি নতুন কাশি, অবিরাম কাশি যা শুকনো কাশি এবং জ্বর হয় তাহলে অবশ্যই নিজের থেকে আইসোলেশনে যাওয়া উচিত।
৬) আমার কি খাবার ও ওষুধ মজুদ করা দরকার?
না, মজুদ করা হলে অন্য জনস্বাস্থ্যের সমস্যা সৃষ্টি হবে। এটির কোনও প্রয়োজন নেই, মানুষদের এটা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।
৭) আমার পোষা প্রাণী কি আক্রান্ত হতে পারে?
না, এটি একটি প্রজাতির নির্দিষ্ট ভাইরাস এবং আপনার পোষা প্রাণী সম্ভবত এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ।
৮) আমি যখন সেলফ আইসোলেশনে যাব তখন কি পুরো পরিবার থেকেও আলাদা হওয়া উচিত?
আইসোলেশনে নিজেকে আলাদা ঘরে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এসময় পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে আপনার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৯) করোনার প্রতিরোধে ভিটামিন গ্রহণের সম্পর্কে কি?
অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণ এখানে সহায়তা করবে বলে কোনও প্রমাণ নেই। তবে প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এতে করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তি যোগায়।
১০) আমার কি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার বন্ধ করা উচিত?
এসময় আমাদের সবার উচিত বাসায় থেকে কাজ করা। বাইরে বের হওয়া একেবারেই উচিত নয়। তবে একান্ত প্রয়োজনে অল্প সময়ের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার সম্ভবত বড় কোন ঝুঁকি নয়।
১১) আমি কি আমার বাচ্চাকে কোলে নেওয়া বন্ধ করবো?
সুসংবাদটি হল বাচ্চা এবং যুবকেরা করোনভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন না, তবে যদি তাদের মাঝে লক্ষণগুলি পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে তাদের পৃথক রাখাই শ্রেয়।
১২) মদ খাওয়া যাবে কি? মদ খেলে কি করোনার ঝুঁকি কমে?
না, আমরা আর সমস্যা চাই না! অ্যালকোহল দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে পারেন, পেট নয়।
১৩) খাবার সরবরাহ করা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, আপনি নিরাপদ দূরত্বে থেকে খাবার সরকরাহ করতে পারেন। তবে এজন্য আপনাকে যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৪) আইসোলেশন কি ভাইরাসের চেয়েও খারাপ হতে পারে?
আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নতা অনেক সময় বৃদ্ধ মানুষের জন্য সমস্যা। তাই তাদের সংস্পর্শে থাকা প্রয়োজন তবে সরাসরি শারীরিক যোগাযোগ যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
১৫) করোনার সঙ্গে গ্লাভস পরার সম্পর্ক কী?
গ্লাভস আসলে কোন কাজে আসে না। কারণ আপনি যদি গ্লাভসের সাহায্যে কোনও কিছু স্পর্শ করেন তবে আপনি খালি হাতে যেমন ভাইরাসটি আপনার মুখের মধ্যে সঞ্চার করতে পারেন, গ্লাভস পরা থাকলেও একই ঘটনা ঘটবে। এ ক্ষেত্রে হ্যান্ড ওয়াশিং সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
১৬) আমার কতক্ষণ সেলফ আইসোলেশনে থাকা উচিত?
যদি আপনার জ্বর, শুকনো বা নতুন কাশি হওয়ার লক্ষণ পাওয়া যায় তবে সাত দিন। তবে আপনি যদি তখন ভাল অনুভব করেন তবেই এটি শেষ।
১৭) আমার কখন চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে?
আপনার যদি শ্বাস নিতে অসুবিধায হয় এবং আপনার লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে।
১৮) আমি যদি করোনায় সংক্রমিত হই তবে এটি কতক্ষণ চলবে?
ভাইরাসটি আপনাকে কতটা হালকা বা পরিমিতরূপে সংক্রমণ করে এটি তার উপর নির্ভর করে। এটা কারও ক্ষেত্রে ১০ দিন আবার কারও ক্ষেত্রে ১৪ দিন পর্যন্ত থাকে। তবে সুস্থ হওয়ার পরও নিজেকে আরও ১৪ দিন বিচ্ছিন্ন করে রাখা উচিত।
১৯) এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও কী এটা আজীবনের জন্য আমার মাঝে থাকবে?
আমরা খুব আশা করি তেমনটা যেন না হয়। তবে আমরা এই বিশেষ ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানি না। এ জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
২০) সংক্রমণ হওয়ার পরে আমি কখন সামাজিকভাবে পুনরায় মিশতে পারবো?
আমরা এই ভাইরাসের সাথে পুরোপুরি নিশ্চিত নই, তবে আপনি সম্পূর্ণ ফিট এবং সুস্থ বোধ করার পরে আরও ১৪ দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকা প্রয়োজন।
২১) খাবারে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে?
এমন কোনও প্রমাণ এখনও নেই যে খাবারের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। তবে সাবধানতা হিসেবে আপনার খাবারটি গরম করে খাবেন। তাহলেই সম্পূর্ণ নিরাপদ।
২২) সাপ্লাইয়ের পানির সঙ্গে কি ভাইরাসের কোন সম্পর্ক আছে? এটা কি নিরাপদ?
একেবারে নিরাপদ। এটি ক্লোরিনযুক্ত পানি এবং আমাদের নলের পানিতে ভাইরাসটি টিকে থাকতে পারে তার কোনও প্রমাণ নেই।
২৩) বাচ্চাদের সাঁতার কাটা বন্ধ করা উচিত?
না, এটা করার দরকার নেই - সুইমিং পুলগুলি ক্লোরিন পূর্ণ এবং ভাইরাস ক্লোরিনযুক্ত পানিতে বাঁচতে পারে না।
২৪) বৃদ্ধ আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা বন্ধ করা উচিত?
একেবারেই না. যদি আপনার মাঝে কোনও লক্ষণ না পাওয়া যায় তবে তাদের আপনার সমর্থন এবং ভালবাসা দরকার। করোনায় আক্রান্ত না হলে তাদের পাশেই থাকুন।
২৫) করোনাভাইরাস কি প্রতি ২৪ ঘণ্টায় দ্বিগুণ হয়?
এটার সছিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে মানবদেহে এটা দ্রুত বংশ বিস্তার করে।
২৬) ডাক্তারের সাথে জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রয়োজন হলে আমি কী করব?
ডাক্তাররা এই মুহুর্তে টেলিফোনে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া শুরু করেছেন। করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিরা সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে টেলিফোনে পরামর্শ নিবেন। ফোনে ডাক্তারকে কল করুন বা স্কাইপ অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন।
২৭) আইসোলেশনে থাকলে কিভাবে আমি কী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষা করব?
আইসোলেশনে থাকার অর্থ আপনি করোনায় আক্রান্ত কি-না সেটা পরীক্ষা করা হবে না। এই টেস্টগুলি কেবলমাত্র হাসপাতালের পরিবেশে করা হবে।
২৮) তারা করোনভাইরাস পরীক্ষা কিভাবে করবেন?
এটি নাক এবং গলার পিছনে একটি সহজ লালার পরীক্ষা।
২৯) কত দ্রুত এই পরীক্ষার ফলাফল আসবে?
সাধারণত ফলাফল ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাওয়া যায়। আশা করি এটা আরও দ্রুত হবে।
৩০) কারও মাঝে করোনা ভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষা করার কোন উপায় আছে কি?
এখনও নেই, তবে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি এবং আমরা আশা করি এটি এক মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে।
৩১) সরকারের উপদেষ্টাদের কি বিশ্বাস করা যায়?
অবশ্যই, আমরা তাদের উপর ভরসা রাখতে পারি, তারা অন্যান্য বিজ্ঞানীর সাথে প্রচুর পরিমাণে কথা বলে এবং তারা সঠিক পথে রয়েছে।
৩২) অন্য দেশের তুলনায় কেন যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া আলাদা?
কারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আলাদা, পরিস্থিতি আলাদা, জনসংখ্যা আলাদা। আমাদের উপদেষ্টাদের বিশ্বাসও আলাদা।
৩৩) এই ভাইরাসটি কি ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর মতো?
না এটি একই নয় - তবে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে, কারণ এটিও মহামারি। তবে আমরা কীভাবে মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বেশি রক্ষা করতে পারি সে প্রচেষ্টা এখন আমরা আগের চেয়ে অনেক ভালো জানি।
৩৪) এই ভাইরাসের শেষ কখন হবে?
এটি এমন একটা প্রশ্ন যার উত্তর কেউ জানে না। তবে বিশেষজ্ঞরা জুনের মাঝামাঝি এই ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসবে বলে আশা করছেন।
৩৫) ভাইরাসটি নির্মূল হতে কত দিন লাগবে?
এটি বলা বেশ কঠিন। কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে, আবার কয়েক মাসও স্থায়ী হতে পারে। আসলে এই মহামারিটির শেষ কোথায় আমরা এখনও সেটা দেখতে পাচ্ছি না।
৩৬) স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা কি ঝুঁকিতে আছেন?
আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি - ইতালি থেকে যে পরিসংখ্যান আমরা জানি সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২০ শতাংশের চেয়ে বেশি সংক্রামিত হতে পারে এবং তাদের মধ্যে কিছু এরই মধ্যে মারা গেছে। আমাদের সত্যই আমাদের স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের দেখাশোনা করতে হবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলি রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা উচিত।
৩৭) এনএইচএস কি এই সংকট মোকাবেলা করতে পারে?
আমি মনে করি না, বিশ্বে একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে যা সত্যিই এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারে। আমরা যা করতে পারি তা হল বিস্তার রোধ করা এবং মৃত্যুহার হ্রাস করা।
৩৮) এই সংক্রমণের জন্য কি কোনও কার্যকর চিকিৎসা থাকবে?
বর্তমানে আমাদের কোন কার্যকর নিরাময় নেই, তবে আমাদের যা আছে তা সহায়ক চিকিৎসা যা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে কার্যকর হতে পারে। আমরা ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে খুব কঠোর পরিশ্রম করছি।