চীনের অভিজ্ঞতা থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা আক্রান্তের ৫ থেকে ১০ দিন পর এটির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেহেতু এ রোগের কোনো প্রতিষেধক ও ওষুধ নেই, সে কারণে এটিকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়েই ভাইরাসবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) তিনটি বিষয়ে ওপর দিতে বলেছে।
জানতে হবে কীভাবে করোনা ছড়ায়
সিডিসির বলছে, যেহেতু করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক ও ওষুধ নেই, সে কারণে এটি প্রতিরোধের উপায় জানলে রোগটিকে প্রতিরোধ করা যাবে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি ও কফ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। হাঁচি, কাশির ও কফের কণা বাতাসে ভেসে থাকে। ওই বাতাসের কণার সংস্পর্শে গেলে সেখান থেকে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।
এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী এ দূরত্ব হতে হবে তিন ফুট।
নিজেকে করোনা থেকে মুক্ত রাখার উপায়
সিডিসি বলছে, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া একটি কার্যকর উপায়। অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান মেখে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা। বিশেষত জনসমাগম এলাকা থেকে আসার পর হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া মুখ, নাক ও চোখে হাত দেওয়ার আগে হাত ধোয়ার ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিষ্ঠানটি।
পানি ও সাবান যেসব স্থানে নেই বা ব্যবহার করা কঠিন, এ রকম পরিস্থিতিতে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। স্যানিটাইজার দুই হাতে ভালো করে মাখিয়ে হাতের ত্বক শুকিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে স্যানিটাইজারে অবশ্যই ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকতে হবে।
কোনোভাবেই সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার না করে মুখ, নাক ও চোখে স্পর্শ করা যাবে না।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে করোনা-আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন ব্যক্তির কাছে যাওয়া যাবে না।
অন্যদের যেভাবে করোনা থেকে মুক্ত রাখবেন
সিডিসি বলছে, যদি আপনি করোনা-আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে বাসা থেকে বের হবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হন।
মুখ টিস্যু বা কাপড় দিয়ে ঢেকে হাঁচি-কাশি দিন। যদি টিস্যু বা কাপড় না থাকে, তাহলে নিজের বাহু দিয়ে ঢেকে হাঁচি কাশি দিন। হাঁচি-কাশিতে ব্যবহৃত টিস্যু বা কাপড় ঢাকনাযুক্ত আবর্জনা রাখার বিনে ফেলুন। এগুলো পরে পুড়িয়ে ফেলুন।
হাঁচি-কাশি দেওয়ার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন। সাবান ও পানি না থাকলে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
প্রতিরোধে ও ভালো রাখতে মাস্ক কার্যকর
সিডিসি বলছে, যদি আপনি অসুস্থ অবস্থায় অন্য মানুষের সংস্পর্শে যান, তখন অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
যাঁরা আক্রান্ত নন, তাঁদেরও মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি। কারণ যখন আপনি জনসমাগম অঞ্চলে যান সেখানে কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়, এটি জানার উপায় নেই—সে জন্যই মাস্ক পরে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি।
প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে
সিডিসি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ওপর জোর দিতে বলেছে। প্রতিদিন যেসব জিনিসপত্র হাত দিয়ে ধরতে হয়, তা জীবাণুমুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে তারা। এসব জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটারের কিবোর্ড, মাউস, টেবিল, ফোন, মুঠোফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, টয়লেট, ঘর বা অফিসের ফ্লোর, বাথরুম ও ঘরের দরজার হাতল, সব ধরনের ইলেকট্রিক সুইচ, রিমোট, পানির কলের ট্যাব। অর্থাৎ, যেসব জিনিসপত্র প্রতিদিনই এক বা একাধিকবার ধরতে হয় এমন সবকিছুই জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
ঘরের মেঝে পরিষ্কার ও জীবাণু মুক্ত করতে ডিটারজেন্ট পাউডার বা সাবান পানিতে গুলিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বের ১৬৮টি দেশের প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার ৮৩৯ জন মানুষকে আক্রান্ত করেছে করোনাভাইরাস কোভিড ১৯। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭৭৮ জন মারা গেছে। তবে ভালো খবর হলো, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এমন মানুষের সংখ্যাই হলো ৮৫ হাজার ৮৭১ জন।