হু'র প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, তরুণদের বেছে নেওয়া সিদ্ধান্ত ‘অন্য কারও জন্য জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য’ তৈরি করতে পারে।
বিবিসি'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আড়াই লাখ পার হয়ে গেছে।
ভাইরাস আক্রান্ত বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি বলে অনেক দেশেই তরুণেরা স্বাস্থ্য সতর্কতা নিয়ে আত্মসন্তুষ্ট। এ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের মন্তব্যে সে একই বিষয় ফুটে উঠেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এখন এ মহামারির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ইউরোপ।
ইতালিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার দেশটিতে ৬২৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৩২।
অনেক দেশ এবং অঞ্চল শুক্রবারে নতুন করে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো হলো:
যুক্তরাজ্য: দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, গতকাল রাত থেকে ক্যাফে, পাব ও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র: মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ককে ‘লকডাউন’ করা হয়েছে। ওষুধের দোকান, মুদির দোকানের মতো জরুরি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব বন্ধ থাকবে।
কর্মচারীদের প্রয়োজনে ঘর থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে।
স্পেন: বিনা কারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করলে সেনাবাহিনীর টহল দল তাকে আটক করবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির সরকার।
বাভারিয়া: জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল এ অঞ্চল লকডাউন করা হয়েছে। এটাই দেশটিতে প্রথম লকডাউনের ঘটনা।
ফ্রান্স: পুলিশ জানায়, প্যারিস রেলস্টেশনে প্রহরা বসানো হয়েছে, যাতে কেউ সপ্তাহের ছুটিতে বাইরে ভ্রমণে যেতে না পারেন।
ইন্দোনেশিয়া: আগামী সোমবার থেকে জাকার্তায় জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে। বার, সিনেমা হলসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা বলছে
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্যালয় থেকে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে টেড্রস অ্যাডহানম বলেন, যদিও বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি আঘাত পান, তবু অল্প বয়স্ক লোকদের এড়ানো যায় না।
তরুণদের উদ্দেশে টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘তরুণদের জন্য আমার একটি বার্তা আছে: তোমরা “অজেয় নও”। এই ভাইরাস তোমাদের কয়েক সপ্তাহের জন্য হাসপাতালে পাঠাতে পারে। এমনকি মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দিতে পারে। হয়তো তোমাদের অসুখ হবে না। কিন্তু তোমাদের অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা আরেকজনকে জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে ঠেলে দিতে পারে।’
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর বিশ্বের বাকি দেশগুলোকে আশার আলো দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস।
গবেষণায় দেখা গেছে, সব বয়সী মানুষই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে তা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি বিপজ্জনক। ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের গড় বয়স ৭৮ দশমিক ৫। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, চীনে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ৫০ বছরের নিচে বয়সীর সংখ্যা ১ শতাংশের কম। তবে যাঁদের বয়স ৮০–এর বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশের বেশি।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরিবর্তে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ মারিয়া কার্কহোভ বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ সংযুক্ত থাকুক। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখুন। এটা শরীর সুস্থ রাখার মতোই জরুরি।’