সৌরভ গাঙ্গুলীর কাছে প্রশ্নটা ছিল ভারতে করোনার তীব্রতা আর মৃত্যুর মিছিলে তাঁদের আইপিএল চালিয়ে যাওয়াটা ঠিক ছিল কি না। উত্তরে আবারও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কিংবা ইউরোপের অন্যান্য লিগের প্রসঙ্গ টেনে সাফাই গাইলেন ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক ও বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি।
তাঁর কথা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও অনেক খেলোয়াড় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যান্য লিগেও তা-ই। সেসব লিগ তো থামেনি। সৌরভ বলতে চেয়েছেন, খেলোয়াড়েরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইপিএল বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের সংবেদনশীল প্রমাণ করেছে বিসিসিআই।
তবে নিজে যতই নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে বলুন না কেন, সৌরভ নিজেও বুঝছেন ভারতের পরিস্থিতি এ মুহূর্তে খুবই খারাপ। এতটাই খারাপ যে আপাতত দেশের মাটিতে ক্রিকেটের পাট বন্ধ করেই রাখতে হবে তাঁদের। আইপিএল স্থগিত করার সময় যে ‘সামনে যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে’ বাকি অংশ আয়োজন করে ফেলার কথা বলা হয়েছিল, সে জায়গা থেকেও সরে আসতে হচ্ছে সৌরভদের। আইপিএল আর ভারতে আয়োজনের কোনো অবস্থা নেই—এটা বিসিসিআই সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। কেবল তা-ই নয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়েও যে ঘোরতর শঙ্কা আছে, সেটিও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
‘দুবাইয়ে আইপিএল আয়োজন ছিল অনেক কঠিন একটা কাজ। ঘরোয়া ক্রিকেট ভারতে আয়োজন করতে গিয়েও প্রচুর ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর সব আরও এলোমেলো হয়ে গেছে। সবাই বুঝতে পারছে ক্রিকেট আয়োজন এখন কতটা কঠিন। করোনা মহামারি না গেলে যেকোনো ধরনের ক্রিকেট আয়োজনই কঠিন হয়ে পড়বে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি আছে,’ বলেছেন সৌরভ।
আইপিএল প্রসঙ্গে সৌরভ বাস্তবের জমিতেই পা রাখতে চান, ‘সূচি খুবই ঠাসা। এর মধ্যে কীভাবে আইপিএলের বাকি অংশ আয়োজিত হবে! ইংল্যান্ডের বাকি অংশ আয়োজনের কোনো সম্ভাবনা নেই। ইংল্যান্ড সফরের পরে ভারত জাতীয় দল শ্রীলঙ্কায় তিনটি ওয়ানডে ও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলবে। এখন কোয়ারেন্টিনের নিয়ম সব দেশেই খুব কড়া। আমি জানি না আইপিএলের বাকি অংশ আয়োজনের সুযোগ আমরা আর কবে পাব।’
ভারতে করোনার ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আইপিএল আয়োজনের সিদ্ধান্তের সমর্থনে ইংলিশ লিগ বা ইউরোপের অন্যান্য লিগের উদাহরণ টানছেন সৌরভ। কিন্তু সেসব লিগে তো খেলোয়াড়েরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর লিগ বন্ধ হয়ে যায়নি। ম্যাচটা পিছিয়ে গেছে। ইংলিশ লিগেই এমন উদাহরণ অনেক আছে, যেখানে দুই দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ম্যাচের আগে পজিটিভ হওয়ার পর খেলা পিছিয়ে গেছে। পরে সে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৌরভ মনে করেন, যেটা ইংলিশ লিগে সম্ভব, সেটা আইপিএলে সম্ভব নয়, ‘ইংলিশ লিগে ম্যাচ পিছিয়ে পরে আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু আইপিএলে সেটি সম্ভব নয়। খেলা সাত দিন পেছালেই ক্রিকেটাররা বাড়ি চলে যাবে। আবার ফেরাতে হলে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে তাদের, যেটি অনেক কঠিন।’
আইপিএল স্থগিত হয়ে যাওয়াটা বড় ধাক্কাই দিয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডকে। বিসিসিআইয়ের শতকরা ৬০ ভাগ রোজগারই আসে আইপিএল থেকে। তাই টুর্নামেন্টটি করার পেছনে বা মহামারির ভয়াবহতার মধ্যেও চালিয়ে যাওয়ার পেছনে যে আর্থিক উদ্দেশ্যেই প্রধান ছিল, সেটি না বললেও চলছে। সৌরভ কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, আইপিএল মাঝপথে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপির মতো।