এদিকে গত বছরের ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম যোগদানের পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় ৩১ মে। সেদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় মাত্র ১৪৩ কোটি টাকা। যেখানে আজকে একদিনেই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৪৩ কোটি টাকার লেনদেন ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকারও উপড়ে। এই সময়ের মধ্যে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বিএসইসিতে যোগদানের পর ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। গত ৩১ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। যেখানে গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা।
একই সময়ে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে ১ হাজার ৭৬৯ পয়েন্ট। গত বছর এই সময়ে সূচকটি ছিল ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে। বর্তমানে ডিএসইর প্রধান সূচক অবস্থান করছে ৫ হাজার ৮২৯ পয়েন্টে।
গত বছরের ১৭ মে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র দায়িত্ব নেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সে হিসেবে সোমবার (১৭ মে) এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গত একবছরে যুগান্তকারী বেশ কিছু সিদ্ধান্তের ফলে দেশের শেয়ারবাজারে সুদিন ফিরেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এর বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছে। এরই সুফল পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে। আগামীতে বিনিয়োগকারীদের এ আস্থা ধরে রাখা-ই হবে পুঁজিবাজারের জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্বই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে, যেখানে মূখ্য ভূমিকায় রয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বাজার আরও ভালো হবে। শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা ছিল আস্থার সংকট। আস্থার সংকটের কারণেই শেয়ারবাজার এতো দিন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সুশাসন নিশ্চিতে বর্তমান কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, বর্তমান কমিশন আস্থার সংকট দূর করতে পেরেছে, ভালো কাজ করেছে। তারা যথেষ্ট উদ্যোগী ও তৎপর। কিছু বিষয় কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো। বিশেষ করে পাবলিক ইস্যু রুলসে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) সমবন্টন সংক্রান্ত যে বিধান পরিবর্তন করেছে, যা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। এছাড়া তালিকাভুক্ত দুর্বল কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। এটা কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যানের নেয়া সাহসী পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ছিল ফ্লোর প্রাইস তুলে না নেওয়া। শেয়ারের দরপতন ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস (প্রতিটি শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর) তুলে নেওয়ার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বহুমূখী চাপ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় তাতে কোন কর্ণপাত করেননি বিএসইসির চেয়ারম্যান।
এছাড়াও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল- দূর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তি ঠেকানো। ইতোমধ্যেই শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বে থাকা কমিশন সেই রাস্তাও বন্ধ করেছেন। পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা অনেকগুেলো দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেকচারিং, বি. ব্রাদার্স গার্মেন্টস, বিডি পেইন্টস, বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, আল ফারুক ব্যাগস, ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড উল্যেখযোগ্য। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে জেড গ্রুপে থাকা কোম্পানিগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে আমুল পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। বাজারে এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে।
এদিকে নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরই ঘোষণা দিয়েছিল মন্দ মানের কোনো কোম্পানিকে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে অনুমতি দিবে না এবং ভালো কোম্পানিকে দ্রুততার সঙ্গে আইপিও অনুমোদন দিবে। এর প্রমাণও মিলেছে। গত এক বছরে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত মুনাফাসহ সম্পদের তথ্য দেওয়ায় অনেকগুলো কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কোনো তদবিরে কাজ হয়নি। একই সঙ্গে ভালো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি, ওয়ালটন, মীর আখতার ও এনার্জি প্যাকের মত কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। কমিশনের এসব কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করে তুলেছে।
অবশ্য মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের বাজারমুখী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। তিনি দায়িত্বশীলদের বোঝাতে সক্ষম হন, অর্থনীতিকে বেগবান করতে শেয়ারবাজারের বিকল্প নেই। এমন আলোচনার মধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে থাকা শেয়ারবাজারকে পুনরায় চালু করেন। দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ৩১ মে চালুর পর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী টানতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। সহযোগিতা চাওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও।বিনিয়োগে ফিরতে বড় বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি বিএসইসির চেয়ারম্যান। অনিয়ম দূর করে মানুষের আস্থা ফেরানোকেই বেশি শুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ হলো- তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে আলটিমেটাম দেওয়া। ফলে বেশকিছু কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই সব শেয়ারের দর বাড়তে থাকে, এর মধ্যেই বাজারে লেনদেনের সময়ও বাড়ানো হয়।
বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের অ্যাকাউন্টসহ সব পরিচালকের শেয়ার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। সিএনএটেক্স এবং তুংহাই নিটিংয়ের সাবেক এমডিসহ তিন পরিচালককে বিনা ঘোষণায় ১২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করায় ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। তথ্য গোপন করে আইপিওতে আসায় বিবিএস কেবলসের সব পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে। কমিশনের এসব সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছে, ভবিষ্যতে এমন সব অনিয়ম হলে কঠোর থাকবে বিএসইসি। এতে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী।
এছাড়াও কার্যকর বন্ড বাজার গড়তে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বন্ডে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।এসব বন্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। এর বাইরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও বড় অঙ্কের বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও বন্ড বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহের আবেদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, সরকারের বড় প্রকল্পের অর্থও বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যাবে। শরিয়াহ অনুযায়ী বিনিয়োগ করার সুযোগ করতে শিগগিরই সুকুক বন্ড চালুর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকারি বিল ও বন্ড যেন শেয়ারবাজারে কেনা-বেচা হয়, তারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে চেয়ারম্যান গত এক বছরে বাজার সংশ্লিষ্ট নানা পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে অসংখ্য ভার্চুয়াল সেমিনারে কথা বলেছেন। এমনকি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসেও কথা বলেছেন, যা ইতোপূর্বে বিশ্বের অন্য কোনো শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এটাকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান সম্প্রতি অর্থসংবাদ’কে বলেছেন, দেশের অর্থনীতি যেভাবে বড় হচ্ছে, অচিরেই শেয়ারবাজার তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। আমরা আধুনিক শেয়ারবাজার উপহার দিতে কাজ করছি। শেয়ারবাজারকে পুরোপুরি অটোমেশন করতে পারলে বাজারে অনিয়ম করে কেউ পার পাবে না। আইটি মানেই স্বচ্ছতা । অটোমেশন হলে সবার কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সহজে পাবেন। শেয়ারবাজার সবার জন্য সহজ হবে। শেয়ারবাজার অটোমেটেড করতে কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই তা দৃশ্যমান হবে। অটোমেটেড হয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টাই শেয়ার কেনা-বেচা করা যাবে।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কেট সংশ্লিষ্ট সব স্টেক হোল্ডারেদর সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ,এনবিআর,অর্থ মন্ত্রনালয় ,জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, আইডিআরএ, ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশন ,মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে একাধিক মিটিং করে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করেছেন। যার ফলে দেশের শেয়ারবাজার পৌঁছে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
এক নজরে এক বছরে নেওয়া বর্তমান কমিশনের পদক্ষেপ
-দরপতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইজ নির্ধারণ
-ব্যাংকের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি
-আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণে আইসিবিকে ঢেলে সাজানো
-নতুন ট্রেক ইস্যুকে ত্বরান্বিতকরণ
-লিস্টেড কোম্পানির অডিটের মান যথাযথ করনে ফাইন্সিয়াল রিপোর্টিং এক্ট বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ
-ওটিসি মার্কেট থেকে পুরাতন কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ
-ভালো আইপিও সরবরাহ (রবি,ওয়ালটন, এনার্জিপ্যাক
-বাজারের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সার্ভেল্যান্স ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ
-৩০ % শেয়ার ধারণ বাস্তবায়ন
-বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যুক্তকরন
-বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণের জন্য রোড শো আয়োজন।
-মার্কেট মেকারের লাইসেন্স প্রদানের উদ্দ্যোগ গ্রহণ।
- ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিনিয়োগ নীতিমালা সংস্কার
-আইপিওতে অংশগ্রহণের জন্য ন্যূনতম বিনিয়োগের নির্দেশনা জারি ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্দ্যোগ
-আন ডিস্টিবিউটেড ফান্ড বাজারে নিয়ে আশার জন্য নীতিমালা তৈরি
-বিভিন্ন বন্ড ইস্যু করে বাজারে ফান্ড ফ্লো বৃদ্ধি ।
- স্মল ক্যাপ বাজার তৈরি
-কমোডিটি বাজার তৈরির জন্য ডিএসইকে দায়িত্ব প্রদান।
-বিএসইকে শক্তিশালী করনে জনবল বৃদ্ধিকরণ
-ডিএসই ও সিএসইকে শক্তিশালীকরণে বিদেশি কনসালটেন্ট নিয়োগ
- করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে মার্কেট চালু রাখা ।
এছাড়াও শেয়ারবাজার তলানিতে নেমে যাওয়ার মধ্যেই বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার দুই মাসের মধ্যেই কারসাজিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা দেন তিনি। একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করেন। সেই সঙ্গে বেশকিছু বিষয়ে সংস্কার আনার উদ্যোগও নেন তিনি। বিএসইসির কর্মকর্তাদের দায়িত্বও রদবদল করা হয়। যার সুফল পেতে থাকে পুঁজিবাজার।
দরপতন ঠেকাতে সিদ্ধান্ত:
৬৬টি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর গত মাসে (এপ্রিল, ২০২১) দরপতন ঠেকাতে নতুন সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই ৬৬টি কোম্পানির শেয়ার এক দিনে সর্বোচ্চ কমতে পারবে ২ শতাংশ। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আগের মতোই ১০ শতাংশ সীমা বহাল রেখেছিল কমিশন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব কোম্পানির শেয়ার মূল্য ৫ টাকার নিচে নেমে গেছে, সেগুলোর দাম কার্যত কমতে পারবে না। কারণ, কোনো কোম্পানির দাম কমা বা বাড়ার সময় সর্বনিম্ন হিসাব হয় ১০ পয়সা করে। ৫ টাকার নিচে যেসব শেয়ারের দাম, সেগুলোর ২ শতাংশ ১০ পয়সার চেয়ে কম।
লভ্যাংশ না দেওয়ায় রবি’কে ডেকে পাঠায় কমিশন:
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা ২০২০ হিসাববছরে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ৩৩ পয়সা হলেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। যার ফলে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে রবি’র পর্ষদকে তলব করে বিএসইসি।
২৩ কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:
দেশের উভয় পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) তালিকাভুক্ত ২৩ কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত চার বছরের বেশি সময় ধরে আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল না করা, করপোরেট গভর্নেন্স কোড পরিপালন না করা এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওটিসি মার্কেটে যেসব কোম্পানি রয়েছে তাদের অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভোগান্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ওটিসি মার্কেটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ৬৪টি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ৪৯টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি কোম্পানি গত চার বছরের বেশি সময় ধরে নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন, বিভিন্ন প্রন্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে না। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলো বার্ষিক সাধারণ সভাও করছে না। এর ফলে কোম্পানিগুলোর করপোরেট পারফরমেন্স, আর্থিক সক্ষমতা ও করপোরেট গভর্নেন্স প্রাকটিস ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছে বিএসইসি।
বিনিয়োগাকরীদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ:
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের সময়উপযোগী অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে বিনিয়োগাকরীদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য একটি। পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করে ছয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার এবং ডিবেঞ্চার হোল্ডারদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)। যা দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে বিরল ঘটনা, এর আগে কখনো বিনিয়োগকারীদের রক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর কমিশনের ৭৪২তম কমিশন সভায় প্রাথমিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ ও কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যূতি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইসিবিকে সংস্কারের উদ্যোগ:
রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। বিভিন্ন অনিয়ম আর তারল্য সংকটের কারণে গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি আইসিবি। এ অবস্থায় সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত এ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে ও সুশাসন ফেরাতে উদ্যোগ:
- মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সুসাশন নিশ্চিত করার জন্য অ্যাসেট ম্যানেজার, ট্র্যাষ্টি,কাস্টডিয়ান ও উদ্যোক্তাদের সকল তথ্য কমিশনের নিকট দিতে বাধ্য থাকবে।
- কমিশন তথ্য না চাইলেও সঠিক সময়ে নিরীক্ষিত আথিক প্রতিবেদন ও ফান্ডের ফিন্যান্সিয়াল অবস্থা, ফান্ডের অবস্থা,বাজারের বিনিয়োগের অবস্থা, ক্যাসফ্লোর অবস্থা বছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে জানাতে হবে।
- ফান্ডের ৬ মাস মেয়াদ শেষ হলো ৪৫ দিনের মধ্যে বিএসইসিতে সব তথ্যসহ জমা দিতে হবে। একই সাথে গত বছরের একই সময়ের অবস্থান জানাতে হবে।
-ফান্ডের ৩ মাস মেয়াদ শেষ হলো ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসিতে সব তথ্যসহ জমা দিতে হবে। একই সাথে গত বছরের একই সময়ের অবস্থান জানাতে হবে।
-প্রতি প্রান্তিক শেষ হওয়ার পর ইউনিটহোল্ডারদেরকে ফান্ডের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে।
- প্রতি প্রান্তিকের প্রতিবেদন অ্যাসেট ম্যানেজারের ওয়েবসাইডে প্রকাশ করতে হবে। একই সাথে আর্ধ বার্ষিকী প্রতিবেদন ৪৫ দিনের মধ্যে অ্যাসেট ম্যানেজারের ওয়েবসাইডে প্রকাশ করতে হবে।
এদিকে, ২০২০ সালে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। করোনার প্রকোপে ভয়াবহ ধস নামলে গত বছরের ১৮ মার্চ তা ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকায় নেমে আসে। বছরের ব্যবধানে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বুধবার (১২ মে, ২০২১) লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪০ কোটি ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকায়।
এছাড়া পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে প্রথম ‘রোড শো’ অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ৯ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এদিকে চলতি বছরের (২০২১) জুনে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ও রাশিয়ার মস্কোতে ‘রোড শো’ করবে বিএসইসি।