এর আওতায় ব্যাংকগুলোকে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে।
রোববার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন নির্দেশনা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও ঘন বসতিপূর্ণ দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিকভাবে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়া) প্রতিরোধ করা এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
ব্যাংকিং সেবা ও কার্যক্রমের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় এ খাত করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং বিশেষত এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে ১৬টি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
১. ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি ব্যাংক তাদের প্রধান কার্যালয়ে একটি ‘কেন্দ্রীয় কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করবে; যাতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
একইভাবে প্রতিটি বিভাগ/জোন/এরিয়া অফিসে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করতে হবে। কোনো বিভাগ/জোন/এরিয়া অফিসের আওতায় বিশেষ কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজনে ‘কেন্দ্রীয় কুইক রেসপন্স টিম’ এর সাথে তাৎক্ষণিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে। এরূপ টিমের সদস্যদের নাম, পদবী, মোবাইল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ব্যাংকের ওয়েব-সাইটে প্রকাশ করতে হবে।
২. প্রতিটি ব্যাংক তাদের জরুরী ব্যাংকিং সেবার তালিকা প্রস্তুত করবে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতেও যাতে এরূপ সেবা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ।
৩. ব্যাংকের গ্রাহক/সেবা গ্রহীতাগণ যাতে ব্যাংক কার্যালয়ে/শাখায়/উপশাখায় সশরীরে উপস্থিত না হয়েই তাদের কাংখিত সেবা গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে সকল ব্যাংককে তাদের ‘অন-লাইন সেবা’ আরো জোরদার করতে হবে।
ব্যাংকের গ্রাহকদের মোবাইল/ইন্টারনেট ব্যাংকিং এ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। যে সকল ব্যাংকিং সেবা ব্যাংকের হটলাইন/কল সেন্টার থেকে দেওয়া সম্ভব সে সকল সেবাসমূহ উক্ত মাধ্যমেই প্রদান করতে হবে। ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে ব্যাংকের হটলাইন/কল সেন্টারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করাসহ ব্যাংকের হটলাইন/কল সেন্টারের মাধ্যমে প্রদেয় সেবার তালিকা এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহককে অবহিত করতে হবে এবং বিস্তারিত ব্যাকের ওয়েবসাইটে ও প্রতিটি শাখায় সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এরূপ স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। হটলাইন/কল সেন্টারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োজিত করতে হবে।
৪. ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কর্মপরিধি অনুযায়ী তাদেরকে ন্যূনতম ২টি সেট এ বিভক্ত করে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে রেশনিং/রোস্টারিং এর মাধ্যমে অফিসের কার্যাবলী সম্পন্ন করতে হবে।
৫. করোনাভাইরাসের প্রতি সংবেদনশীল ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদের তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। ব্যাংকের কোন কর্মকতা বা কর্মচারীর মধ্যে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যথাশীঘ্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ব্যাংকে কর্মরত কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী অথবা পরিবারের কোন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা করোনা আক্রান্তের কোন লক্ষণ দেখা দিলে বা কোনো কারণে করোনা আক্রন্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ঘটনা ঘটলে তাকে মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিন ছুটি হিসেবে ১৪ দিন বিশেষ ছুটি দিতে হবে।
৬. জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত কোনো সভা-সেমিনারের আয়োজন যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
৭. বিভিন্ন অফিস/দপ্তর হতে চিঠিপত্র/দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে আগত বহিরাগত ব্যক্তিদের ব্যাংকের ভেতরে গমনাগমনে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্যাংকের শাখা, উপশাখা ও কার্যালয়ের নিদিষ্ট স্থানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাধ্যমে চিঠিপত্র গ্রহণ ও বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. ব্যাংক শাখা, উপশাখা, এজেন্টসহ সকল কার্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ স্থানে করোনাভাইরাসে আক্রন্ত রোগী সনাক্তকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯. ব্যাংক শাখা, উপশাখা, এজেন্টসহ সকল কার্যালয়ের অভ্যন্তরে চলাচলের পথ, দরজার হাতল, লিফ্ট ও অন্যান্য যেসব স্থানে হাতের স্পর্শ লাগতে পারে সেসব স্থান কর্মদিবস শুরুর পূর্বে, পরে এবং কর্মদিবসে প্রতি এক ঘন্টা পর পর নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০. ব্যাংক শাখা, উপশাখা, এজেন্টসহ সকল কার্যালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে/বিভাগে পর্যাপ্ত সংখ্যক হ্যান্ড স্যানিটাইরজার, ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন ও টিস্যু পেপার রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১১. শিশুদিবা-যত্ন কেন্দ্র/ডে-কেয়ার (যদি থাকে) নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
১২. ব্যাংকের মুদ্রা বিনিময়, স্থানান্তর এবং স্টোরিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ রাখতে হবে এবং উক্ত স্থান/স্থানসমূহ জীবানুমুক্ত নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যতীত দর্শনার্থী/সাক্ষাৎ প্রার্থীদের ব্যাংকে আগমন নিরুৎসাহিত করতে হবে। ব্যাংকে উপস্থিত সকলের মধ্যে যাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
১৪. ব্যাংকের সকল প্রকার সেলস্/মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে।
১৫. করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইইডিসিআর-এর নির্দেশনাসমূহ একীভূত করে ‘করোনা ভাইরাস প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় করণীয়’ বিষয়ে লিফলেট/পোস্টার তৈরি করে তা ব্যাংকের শাখা/আঞ্চলিক/বিভাগীয়/প্রধান কার্যালয়ের প্রতিটি ফ্লোরে সহজেই দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে স্থাপন করতে হবে এবং নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পরিপালিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিতভাবে তদারকি করতে হবে।
১৬. ব্যাংকের সান্ধ্যকালীন এবং সপ্তাহ অন্তের (শুক্র ও শনিবার) সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।