মঙ্গলবার (১ জুন) সরকারের বিভিন্ন কার্যালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এমন দাবি জানিয়েছেন বিহার চেয়ারম্যান এইচ এম হাকিম আলী। তিনি চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদের অন্যতম অংশীদার।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন খাত। তারকা মানের হোটেলগুলো দেড় বছর ধরে প্রায় বন্ধ। অথচ স্বাভাবিক সময়ে বিদেশি অতিথি, পর্যটক ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে মুখর থাকে তারকা হোটেলগুলো। গত বছরের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে হোটেলগুলোতে নেমে আসে স্থবিরতা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবারও অনিশ্চয়তায় ডুবেছে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প। বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের আপাতত বাংলাদেশে আসা সীমিত হওয়ায় তারকা হোটেলগুলো একেবারেই অতিথিশূন্য। এতে সব হোটেল বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পর্যটন খাতের এই মন্দা আগামী পাঁচ বছর থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ৫৫ শতাংশের বেশি। কর্মসংস্থানেও এ খাতের অবদান অনেক। সেবা খাতের কিছু উপখাত অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বড় অংশের পরিস্থিতিই নাজুক। হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, এভিয়েশন, ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটনের অন্য সব প্রতিষ্ঠানকে সেবা খাত হিসেবে বিবেচনা করে ব্যাংকগুলো।
পরিসংখ্যান বলছে, এসব খাতে দেশের ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত বিনিয়োগ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। করোনার প্রথম ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর শীর্ষে হোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটন ও পরিবহন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেবা খাত টিকিয়ে রাখতে গত বছর বিহার পক্ষ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ১৬ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আপৎকালীন সেই প্রস্তাবে বিহা সদস্যদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় পরবর্তী দুই বছরের জন্য সহজ শর্তে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ ছিল, যা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
এ জন্য বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছেন হোটেল মালিকেরা। এগুলোর মধ্যে আছে বিদ্যমান ব্যাংকঋণের সুদ মওকুফ। বিদ্যমান ঋণ পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের কিস্তির সময়সীমা বাড়ানো এবং দুই বছরের জন্য সহজ শর্তে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করা।
বিহার চিঠিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। ওই সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে পর্যটনের নাম উঠে এসেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায়ও সবার আগে বন্ধ হয় পর্যটন খাত। স্থবির হয়ে পড়ে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ পর্যটন খাতের সব ব্যবসা। মহামারিতে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে ব্যাংকঋণের সুদ। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে দেশের সেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের দেউলিয়া হওয়া ছাড়া পথ খোলা নেই বলে মনে করে বিহা। গত এক বছরে ঋণের সুদ পৃথক করে অন্য একটি হিসাবে রাখার দাবি জানায় সংগঠনটি।
হোটেল মালিকদের এই সংগঠন চিঠিতে বলেছে, মহামারিতে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও কিছু খরচ করতেই হচ্ছে। যেমন ব্যাংকঋণের সুদ, পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষেবা ও কর্মচারীদের বেতন। এসব খাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই কর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না। কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে হোটেলগুলোর ঋণের সুদের ওপর সুদ আরোপ বন্ধ না করলে হোটেল মালিকদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে তারা।