এ বছরের ৩০ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড ১ কোটি ডোজ টিকা রাশিয়া থেকে আমদানি ও তাদের নতুন প্রতিষ্ঠিত সর্বাধুনিক কারখানায় শুধু করোনা প্রতিরোধী টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। ওরিয়ন ফার্মার প্রস্তাবটি করোনা মহামারি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে দেশের সব জনগণকে টিকাদানের আওতায় আনতে সরকারের প্রচেষ্টার সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেহেতু কভিড অতিমারী খুব সহজে এবং কয়েক মাসের মধ্যে চলে যাবে বলে মনে হয় না, তাই এ টিকা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের ও দশের মঙ্গল হবে বলে আশা করা যায়। এ অবস্থায় ওরিয়ন ফার্মার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঠানো ডিও পত্রসহ বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থসেবা বিভাগ।
এ বছরের ২৭ এপ্রিল দেশে রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-৫-এর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত জরুরি জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ওষুধ, পরীক্ষামূলক ওষুধ, টিকা ও মেডিকেল সরঞ্জামবিষয়ক কমিটি। একই দিন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সভায় এ টিকা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশে রাশিয়ার টিকা আমদানি ও ব্যবহারের বিষয়টি আইনি ভিত্তি পায়। এর পরদিন ২৮ এপ্রিল রাশিয়ার স্পুতনিক-৫ টিকা সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের জন্য অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার টিকা কেনার জন্য প্রস্তাবিত সরবরাহ চুক্তির বিষয়ে গত ৭ মে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগের মতামত চায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। অর্থ বিভাগ তার মতামতে জানায়, প্রতি মাসে ২০ লাখ করে মোট ১ কোটি ডোজ টিকা আনা যেতে পারে। ১ কোটি ডোজ সরবরাহের পর প্রয়োজন হলে পরবর্তী সময়ে টিকার সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।
রাশিয়া বাংলাদেশে টিকা রফতানির পাশাপাশি প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে বর্তমানে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। দেশে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতার বিষয়টি যাচাই করতে সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোর মান যাচাইয়ে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় কমিটির কাছে দেশের তিনটি ওষুধ কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কারখানায় কভিড-১৯-এর টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানানো হয়। গত মাসের ২ তারিখে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস রাশিয়ার টিকা দেশে আমদানি ও উৎপাদনের বিষয়ে তাদের আগ্রহের বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কোম্পানির প্রস্তাবটি বিবেচনার সুপারিশ করেছে। এখন পর্যন্ত দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, স্পুতনিক-৫, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক, জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনার টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মার অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৩৪ কোটি টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৭৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এদিকে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ১৮ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ৬৬ কোটি টাকা কর-পরববর্তী নিট মুনাফা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারদর দিনের ব্যবধানে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ৫৭ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ ৬৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বনিম্ন ৪২ টাকায় লেনদেন হয়েছে।