সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে নগদ লভ্যাংশ হিসাবে দুই হাজার ৪৫২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও বোনাস লভ্যাংশ হিসাবে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১২৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯১ হাজার ৭৪টি শেয়ার (১০ টাকা দরে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ১০ হাজার ৭৪০টাকা) পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সমাপ্ত বছরে (২০২০ সাল) ভালো লভ্যাংশের পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত) ব্যাংকগুলোর মুনাফা গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বেড়েছে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি। তাই এসব শেয়ারের দামও বাড়তি। সবমিলিয়ে ব্যাংক খাত পুঁজিবাজারের গতি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে উল্লেখ করে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা দিচ্ছে। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো খবর। বিশেষ করে এ বছর ক্যাশ ডিভিডেন্ট (নগদ লভ্যাংশ) দেওয়া হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে ব্যাংকগুলোর হাতে ক্যাশ টাকা আছে। আরও বেশি করে বিনিয়োগ করতে পারবে। আর বিনিয়োগ করতে পারলে সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে।
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ক্যাশ ডিভিডেন্টের চেয়ে বোনাস দেয় বেশি। কারণ, দীর্ঘমেয়াদি গ্রোথে থাকা কোম্পানির জন্য ক্যাশ ডিভিডেন্ট দেওয়া ভালো নয়। নতুন করে বিনিয়োগ করতে হলে টাকার প্রয়োজন হয়, ফলে কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসাবে দেয়। আমাদের দেশে এর ঠিক উল্টোটি হয়— এমনটি মনে করেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের এ চেয়ারম্যান বলেন, ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর মুনাফা খুব যে বেশি হয়েছে তা নয়। তারপরও ক্যাশ ডিভিডেন্ট বেশি দিয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের মনে একটু প্রশান্তি দিতে পারে। তবে এটি কোম্পানির গ্রোথের জন্য ভালো নয়। তার মানে, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ হচ্ছে কম।
তিনি বলেন, গত বছর কিছু কিছু ব্যাংক তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ভালো মুনাফা দিয়েছে। তার মানে কি আগামী বছরও ভালো দিতে পারবে? ভালো লভ্যাংশ দিতে হলে মুনাফা বাড়াতে হবে। মুনাফা বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়লে পুঁজিবাজার, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নিয়ম অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের দুই ধরনের লভ্যাংশ দেয়। নগদ লভ্যাংশ ও বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ। বিদায়ী বছরে তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯ টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। একটি ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এছাড়াও একটি ব্যাংক আগামী ৩০ জুন লভ্যাংশের ঘোষণা দেবে।
ডিএসই’র তথ্য মতে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেবে ইস্টার্ন ব্যাংক। ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারপ্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা করে মোট ১৪২ কোটি ছয় লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেবে। পাশাপাশি সাড়ে ১৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেই হিসাবে ১৪ কোটি ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৯২১টি শেয়ার লভ্যাংশ হিসাবে দেবে।
একইভাবে ডাচ-বাংলা ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের দেড় টাকা করে ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা নগদ আর আট কোটি ২৫ লাখ শেয়ার বোনাস হিসাবে দেবে। সিটি ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ১৭৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা নগদ এবং পাঁচ কোটি আট লাখ ১৯ হাজার ৩৩৩টি শেয়ার দেবে।
প্রিমিয়ার ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের ১২১ কোটি ২৯ লাখ টাকার পাশাপাশি সাত কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৬টি শেয়ার বোনাস হিসাবে দেবে। তবে, যমুনা ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের শুধুমাত্র নগদ ১৩১ কোটি ১১ লাখ টাকা দেবে। একইভাবে প্রাইম ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের ১৬৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, আল-আরাফাহ ব্যাংক ১৫৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংক ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, পূবালী ব্যাংক ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক ১১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ব্যাংক এশিয়া শেয়ারহোল্ডারদের ১১৬ কোটি ৫৯ টাকা নগদ লভ্যাংশ দেবে।
এদিকে, ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য শুধু বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চারটি ব্যাংক। এর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংক ৫ শতাংশ হারে আট কোটি নয় লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৩টি শেয়ার দেবে বিনিয়োগকারীদের। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দেবে সাত কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৪১টি শেয়ার, রূপালী ব্যাংক দেবে চার কোটি ১৪ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৩টি শেয়ার এবং এবি ব্যাংক দেবে তিন কোটি ৯৮ লাখ এক হাজার ৮৪২টি শেয়ার।
এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বাবদ শেয়ারহোল্ডারদের মোট ১৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা দেবে। একইসঙ্গে পাঁচ শতাংশ বোনাস বাবদ ছয় কোটি ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৪টি শেয়ার দেবে। এক্সিম ব্যাংক পাঁচ কোটি ৯২ লাখ টাকা নগদ এবং তিন কোটি ৫৩ লাখ ছয় হাজার ২৭৭টি শেয়ার দেবে।
অপরদিকে, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লভ্যাংশ হিসাবে নগদ ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার পাশাপাশি চার কোটি ৯২ লাখ ৮১১টি শেয়ারও দেবে। একইভাবে এনসিসি ব্যাংক ৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নগদ আর সাত কোটি নয় লাখ ৪৪ হাজার ৪৮৬টি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসাবে দেবে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৬৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা নগদের পাশাপাশি চার কোটি ৯০ লাখ চার হাজার ৬১৭টি শেয়ার, ট্রাস্ট ব্যাংক ৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নগদ এবং ছয় কোটি ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৯৮টি শেয়ার, উত্তরা ব্যাংক ৬২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা নগদ আর ছয় কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৯টি শেয়ার, ইউসিবি ব্যাংক ৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকার নগদ আর ছয় কোটি আট লাখ ৭৬ হাজার ৪৫টি শেয়ার, ঢাকা ব্যাংক তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা নগদ এবং পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৪টি শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের দেবে।
এছাড়া ওয়ান ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের ৫৩ কোটি ১২ লাখ টাকা নগদ এবং চার কোটি ৮৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫২টি শেয়ার লভ্যাংশ হিসাবে দেবে। এনআরবিসি ব্যাংক ৫২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা নগদ আর তিন কোটি ৫১ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০টি শেয়ার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ৪৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নগদ আর চার কোটি ৭৪ লাখ ৩৮ হাজার ১০টি শেয়ার, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা নগদ আর চার কোটি ৬৯ লাখ ৪২১টি শেয়ার এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা নগদ আর দুই কোটি ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭০টি শেয়ার লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের দেবে।