বুধবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করেছে। দেশের সব ব্যাংক, বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) ও ডি মানি, আই-পের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নির্দেশনায় বলেছে, খাদ্য, মুদি, ওষুধ, রাইড শেয়ারিং, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা, শিক্ষা মাশুল, হোটেল বুকিং, টিকেটিং (বাস, এয়ার, ট্রেন, লঞ্চ) কিংবা অনুরূপ নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং জরুরি পণ্য ও সেবা সঙ্গে সঙ্গে বা ৫ দিনের মধ্যে প্রদান করে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও অন্য আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের বিবেচনায় অর্থ ছাড় করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছে পণ্য বা সেবা পৌঁছেছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। তবে অর্থ পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলো লেনদেনের ঝুঁকি, গ্রাহকসেবার মান, পণ্য সরবরাহ সন্তুষ্টি এবং পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক পর্যালোচনা করে নিজ বিবেচনায় অর্থ ছাড় করবে। মূলত চালডাল, স্বপ্ন, পাঠাও, উবার, ফুডপান্ডার মতো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বা সেবা দোকান বা নিজস্ব শোরুমের মাধ্যমে বিক্রি করে। পাশাপাশি অনলাইনেও পণ্য বা সেবা বিক্রি করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান যারা সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করে থাকে, তাদের ক্ষেত্রেও ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের বিবেচনায় অর্থ ছাড় করতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও গ্রাহকের পণ্য বুঝে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। আড়ং, ইয়োলো, সিঙ্গার, স্যামসাংসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব শোরুমের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করে থাকে।
আর যেসব প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৭ দিনের মধ্যে গ্রাহকের কাছে পণ্য বা সেবা পৌঁছে দিতে পারবে না, তারা টাকা পাবে গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য বা সেবা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গ্রাহকের টাকা পরিশোধকারী ব্যাংক বা অন্য আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব নিষ্পত্তি (সেটেলমেন্ট) হিসাবে রেখে দেবে। তবে এ অর্থ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পণ্য বা সেবা সরবরাহে যেসব প্রতিষ্ঠান ৭ দিনের বেশি সময় নেবে, অর্থ ছাড়ের জন্য তাদের গ্রাহকের নাম, মোবাইল নম্বর ও ক্রয়াদেশের বিবরণসহ একটি তালিকা অর্থ পরিশোধকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দিতে হবে।
ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা সরবরাহের বিপরীতে অর্থ ছাড়ের জন্য যে তালিকা দেবে, সেই তালিকার কোনো গ্রাহক থেকে সেবা বা পণ্য না পাওয়ার প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইতে পারবে অর্থ পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। সে ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে।
ভুল তথ্য প্রদানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ পরিশোধ সেবা স্থগিত করতে হবে। পাশাপাশি বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। এ ধরনের তালিকাভুক্ত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরে সব ধরনের পরিশোধ সেবা নেওয়ার যোগ্যতা হারাবে।
এ ছাড়া ভাউচারের বিপরীতে পণ্য ক্রয় বা সেবা গ্রহণ না করা পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা যাবে না। ভাউচার ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি করা খরচের অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হওয়ার পর খরচের সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করা যাবে।