‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে সিএসই’র ওয়েবিনার

‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে সিএসই’র ওয়েবিনার
প্রতি বছরের মতো এবারও দেশে ৪ থেকে ১২ অক্টোবর ২০২১ উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ। এবার সপ্তাহটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “টেকসই অর্থায়ন এবং প্রতারণা ও গুজব এর প্রতিরোধকরণ” । ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসকো ) সঙ্গে যৌথভাবে দিবসটি উদযাপন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ।

বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য আইওএসকো এর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে-এটি একটি বিশ্বব্যাপী প্রচার, যার লক্ষ্য বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রচার করা সেই ধারবাহিকতায় সিএসই (চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লি.) ওয়েবিনার এর আয়োজন করেছে ।

বুধবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে “পুঁজিাবাজারের প্রেক্ষিতে টেকসই আর্থিক ব্যবস্থা” শীর্ষক এ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয় ।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, কমিশনার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সিএসই এর সম্মানিত ট্রেক এর প্রতিনিধিগন । মূল নিবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন ডঃ মোহাম্মদ সালেহ্ জুহুর, অধ্যাপক, অর্থ বিভাগ,ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব মো. গোলাম ফারুক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), সিএসই এবং বিশেষ বক্তব্য রাখেন জনাব আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, সিএসই । অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জনাব আরিফ আহমেদ, এজিএম এবং হেড অব ট্রেনিং এন্ড ডেবোলেপমেন্ট ।

স্বাগত বক্তব্যে গোলাম ফারুক বলেন, কোভিড পরবর্তী বিশ্বব্যাপী অর্থিনৈতিক মন্দা ছড়িয়ে পড়েছে, সাথে সাথেই বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট ও উত্তররাউত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । এখন পৃথিবীময় যে চ্যালেঞ্জগুলো ছড়িয়ে পড়েছে তার মধ্যে হলো আর্থিক সংকট, সামাজিক ও পরিবেশগত বাধা পুঁজিবাজার এ প্রধান সমস্যাগুলোর সাথে জড়িয়ে পড়েছে, কেননা পুঁজিবাজার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত, আর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বা বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে হলে যা যা নিশ্চিত করতে হবে তা হলো সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানিক সুশাসন এবং সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানিক পরিবেশ।

এ কারণে এ মুহূর্তে ESG নিয়ে পৃথিবীময় বেশ আলোচনা হচ্ছে, তা বিস্তারিত বলতে গেলে বলতে হয় Environment, Social and Governance। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়সমূহ, মানবাধিকার এবং দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, এটি কোম্পানি তথা ব্যবসাকে যেমন প্রভাবিত করতে পারে তেমনি এগুলোর উন্নয়নে সমভাবে প্রাতিষ্ঠানিক মানও নিশ্চিত করতে পারে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন ও আর্থিক কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করতে হলে কোম্পানিকে সক্রিয়ভাবে ভাবে ESG ঝুঁকি ব্যাবস্থাপনা এবং সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থ প্রবাহকে নিশ্চিত করতে হবে। এটা যেমন ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করবে ঠিক তেমনি ভালো বিনিয়োগকারীও সৃষ্টি করবে আর স্বচ্ছতা ব্যাবসায় বিশ্বাস স্থাপন ও শক্তিশালী ন্যায় বাজার নিশ্চিত করতে অবদান রাখে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএস ’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ” টেকসই অর্থায়ন (Sustainable Finance) আর্থিক খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পরিবেশগত, সামাজিক ও শাসন (ESG) বিবেচনায় নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা টেকসই অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এবং প্রকল্পগুলিতে আরও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে পরিচালিত করে । পরিবেশগত বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং অভিযোজন, সেইসাথে পরিবেশকে আরও ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দূষণ প্রতিরোধ এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি । সামাজিক বিবেচনায় অসমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলকতা, শ্রম সম্পর্ক, মানব পুঁজি ও সম্প্রদায়ের বিনিয়োগের পাশাপাশি মানবাধিকারের বিষয়গুলি উল্লেখ করা যেতে পারে। ব্যবস্থাপনা কাঠামো, কর্মচারী সম্পর্ক এবং নির্বাহী পারিশ্রমিক সহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শাসন-সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সামাজিক ও পরিবেশগত বিবেচনার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মৌলিক ভূমিকা পালন করে ।

জাতিসংঘের Sustainable Stock Exchanges (এসএসই) উদ্যোগ, 2009 সালে চালু যা জাতিসংঘের একটি অংশীদারিত্ব কর্মসূচি । এটি UNCTAD, জাতিসংঘের গ্লোবাল কম্প্যাক্ট, জাতিসংঘের পরিবেশ এবং দায়িত্বশীল বিনিয়োগের নীতি (PRI) দ্বারা পরিচালিত। এটি SDG ইস্যুতে ঐক্যমত্য ও সক্ষমতা গড়ে তুলতে স্টক এক্সচেঞ্জ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকদের একত্রিত করে । এই পর্যন্ত, 108 টি স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বাজারে Sustainability এগিয়ে নেয়ার জন্য UN SSE- র মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। জাতিসংঘের এসএসই, Gender সমতা (SDG 5.5), SME অর্থায়ন (এসডিজি 8.3.), সিকিউরিটিজ মার্কেট রেগুলেশন (এসডিজি ১০.৫), Sustainability প্রতিবেদন (এসডিজি 12.6), সবুজ অর্থায়ন (SDG 13.3) এবং টেকসই মূলধন বাজারের জন্য অংশীদারিত্ব (SDG 17)- এর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ।

বাংলাদেশে আমরাই প্রথম জাতিসংঘ Sustainable Stock Exchanges (UN SSE) Initiative -এর Partner Exchange হয়েছি ৩১ জানুয়ারী ২০১৭-তে। এরি ধারাবাহিকতায়, আমরা CSE, সম্প্রতি, UN SSE, International Finance Corporation (IFC) এবং Climate Disclosure Standards Board (CDSB),UK-র সহযোগিতায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-জুমে আমাদের Stakeholder-দের জন্য Climate Disclosure- এর উপর ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ দুই দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন করেছি। এতে দুই শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেছেন ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দেশের মানুষের জন্য মেীলিক অধিকারসমূহ অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা , চিকিৎসা এবং বাসস্থান নিশ্চিত করার কথা আছে । আমাদের সব কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে হচ্ছে এই অধিকার সমূহ নিশ্চিত করা । এক্ষেত্রে সবাইকে তার নিজের অবস্থান থেকে ভূমিকা নিতে হবে এবং মুনাফা বানানোর প্রেক্ষাপটে থেকে আমাদেরকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন এই মেীলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয় । সরকার এবং আমাদেরকে লক্ষ্যও তাই, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা । শিল্পায়ন সহ অন্যান্য যত ধরনের ক্ষেত্রে আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি সব জায়গা থেকেই আমাদের লক্ষ্য হবে সঠিকভাবে নিজেদের ভূমিকাটুকু দায়িত্ব নিয়ে সম্পাদন করা ।

টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পরিবেশগত পরিবর্তনের দিকে, বিশেষ করে জলবায়ুর পরিবর্তন । এখানে উল্লেখ্য যে, পুজিঁবাজারে ইতিমধ্যে গ্রীন বন্ড আছে, যেহেতু সিএসই এর প্রধান কার্যালয় হচ্ছে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে তাই তারা নতুন প্রোডাক্ট হিসেবে ব্লু বন্ড নিয়ে কাজ করার চিন্তা করতে পারে । এই বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঝুকিঁমুক্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত করে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ সুরক্ষা করা, তাকে উপযুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করা ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন ডঃ মোহাম্মদ সালেহ্ জুহুর,অধ্যাপক, অর্থ বিভাগ,ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । তিনি তার প্রবন্ধে বিশ্বের পুজিবাজারের ক্ষেত্রে Environment, Social and Governance এর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন । একই সাথে এই মহামারী পরবর্তী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার , প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব তুলে ধরেন । তিনি আরো বলেন যে, সময়ের সাথে সাথে এর আরো গবেষণা, প্রয়োগ এবং পুজিঁবাজারে এর প্রায়োগিক ব্যবহার সময়ের দাবি ।

সবশেষে, সিএসই ডিজিএম এবং হেড অব সাবিল্যান্স এন্ড মাকেট অপারেশন, জনাব মোহাম্মদ মতুর্জা আলম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওয়েবিনার প্রোগাম শেষ করেন ।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত